শনিবার, ৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

অগ্নিঝুঁকিতে দেড় শতাধিক মার্কেট

চট্টগ্রামে নেই ফায়ার সেফটি প্ল্যান, জলাধার নির্মাণের দাবি ফায়ার সার্ভিসের

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

অগ্নিঝুঁকিতে দেড় শতাধিক মার্কেট

নগরের টেরিবাজার, তামাকুমন্ডি লেইন, রিয়াজউদ্দিন বাজার, জুবিলী রোড, তিনপুল মাথা এলাকায় দেড় শতাধিক মার্কেট অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ৭২টি। তালিকা থাকলেও এসব মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম বা ফায়ার সেফটির বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা এখনো দেখা মিলেনি। বড় কোনো অগ্নিকান্ডের পর নানা দফতর একটু নড়েচড়ে বসলেও ফের নীরব হয়ে যায়। ফলে অতি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকা করেই দায়সারাভাব সংস্থাগুলোর। দ্রুত সময়ে এসব মার্কেটে পানির জলাধার নির্মাণ না করলে অগ্নিকান্ডে বড় ধরনের ক্ষয় ক্ষতি ও হতাহতের আশঙ্কা করছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. আবদুল হালিম বলেন, টেরিবাজার, তামাকুমন্ডি লেইন, রিয়াজউদ্দিন বাজার, জুবিলী রোড, তিনপুলের মাথা এলাকার ১৫০টি মার্কেট অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর মার্কেট, লাকি প্লাজা, আমিন সেন্টার, আখতারুজ্জামান সেন্টার ও জহুর হকার্স মার্কেটে ফায়ার সেফটি প্ল্যান নেই। তাদের বারবার বলা হলেও তারা আমাদের কথায় কর্ণপাত করছে না। চট্টগ্রামের যেসব সংস্থা মার্কেটগুলো অনুমতি দিয়েছে তাদের প্রয়োজন সেগুলো মনিটরিং করা। যারা নিয়ম না মেনে মার্কেট করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের মালিক, ব্যবসায়ী, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে মিটিং করেছিলাম। মিটিংয়ে দ্রুত সময়ে এসব সমস্যা নিরসনে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। এর মধ্যে রমজান, ঈদ ও এখন এসএসসি পরীক্ষা চলছে। তবে আমরা শিগগিরই অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে ফের অভিযান চালানো হবে। পাশাপাশি মিটিংয়ে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা কতটুকু করেছে তাও দেখা হবে। যেহেতু কাজগুলো তারা করবে, তাদেরও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, মার্কেটগুলোর প্রতিটি দোকানে স্থাপিত বৈদ্যুতিক ওয়ারিং ও ফিটিংস অভিজ্ঞ বিদ্যুৎ প্রকৌশলী দিয়ে প্রতি ছয় মাস পর পর টেস্ট করে রিজস্টার করতে হবে। অগ্নিনির্বাপণের সময় ব্যবহারের জন্য কমপক্ষে ৫০ হাজার গ্যালন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জলাধার নির্মাণ করে পরিপূর্ণ অবস্থায় সংরক্ষণ করতে হবে, বিদ্যমান স্টিলের সিঁড়ির পরিবর্তে বিকল্প সিঁড়ি তৈরি করতে হবে। মার্কেটের মধ্যে হোটেল, চেয়ার দোকান, ফুডকোর্ট ও আবাসন ব্যবস্থা রাখা যাবে না। সম্পূর্ণ মার্কেট হাইড্রেন্টের আওতায় আনতে হবে। মার্কেটে ফায়ার অ্যালার্ম ও ডিটেকশন সিস্টেম স্থাপন করতে হবে। মার্কেটের প্রতিটি দোকানে কমপক্ষে ১টি বহনযোগ্য ফায়ার এক্সিটিংগুইসার সংরক্ষণ করাসহ ১৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মার্কেট কর্তৃপক্ষকে। মার্কেটগুলো পরিদর্শন করে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, পানির রিজার্ভার ও বৈদ্যুতিক লাইনসহ বিভিন্ন অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব মার্কেটে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা ব্যবসায়ী ও মালিক পক্ষ মিলে জেলা প্রশাসনের যে নির্দেশনা রয়েছে সেভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি। আমরাও চাই আমাদের মার্কেট ও ব্যবসায়ীরা নিরাপদে থাকুক। এ মার্কেট বাঁচলে আমরা বাঁচবো। তাই সবার আগে আমরা ভাবছি কীভাবে নিরাপদ ব্যবসার পরিবেশ গড়ে তোলা যায়।

এদিকে ভূগর্ভস্থ জলাধার নির্মাণের জন্য গত ৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে চিঠি লিখেছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, তামাকুমন্ডি লেন বণিক সমিতির অধীনে মার্কেটগুলোতে ১৩ হাজার ৫২২টি বিভিন্ন ধরনের দোকান, গোডাউন, হোটেল ও ৪৫০টি কক্ষ আবাসন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যা জননিরাপত্তা ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু বিএনবিসি মোতাবেক মার্কেটের নিরাপত্তার জন্য অগ্নিনির্বাপণি সরঞ্জামাদি, হাইড্রেন্ট ব্যবস্থা, পানির জলাধার রাখা হয়নি। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর থেকে কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান গ্রহণ করা হয়নি। মার্কেটে রক্ষণাবেক্ষণবিহীন খোলা বৈদ্যুতিক ওয়ারিং রয়েছে। এর থেকে যে কোনো সময় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটার শঙ্কা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর