ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে সিলেটে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আর এমন বৃষ্টি হলে সিলেটে পাহাড়, টিলা ও নদী পাড়ের ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় সিলেটে পাহাড়-টিলার পাদদেশ এবং নদী পাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। গতকাল এই আদেশ জেলার সব ইউএনও বরাবরে পাঠানো হয়। জনসাধারণকে সতর্ক করতে মাইকিং করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ‘মোখা’র কারণে সিলেটে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় জেলার প্রত্যেক উপজেলার জন্য ১ লাখ টাকা করে ও ১৬৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসনের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, প্রতি বর্ষা মৌসুমে সিলেটে টিলা-পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটলেও ঝুঁকি নিয়ে এসবের পাদদেশে বসবাস করেন মানুষজন। ফলে প্রতি বছরই সিলেটে ঘটে টিলাধসে মৃত্যুর ঘটনা। গত বছরের মে মাসে এক ভোরে জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় টিলাধসে একই পরিবারের চারজন নিহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও সিলেটে প্রায়ই পাওয়া যায় টিলাধসে প্রাণহানির খবর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগরসহ সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়-টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় মানুষের বসবাস বাড়ছে। কয়েক বছর আগেও যেসব টিলা এলাকায় মানুষের আনাগোনা ছিল না, সেসব এলাকায় এখন গড়ে উঠেছে বসতি। পরিবেশবিদদের অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা এসব মানুষকে সরিয়ে নিতে প্রশাসনের কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেই। শুধু প্রাণহানি ঘটলে কিছুটা টনক নড়ে প্রশাসনের। প্রশাসন মাঝে-মধ্যে অভিযান দিলে টিলার নিচের মানুষ কয়েক দিনের জন্য অন্যত্র যায়। কিন্তু অভিযানের পরই ফের তারা ফিরে আসেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট মহানগরের এয়ারপোর্ট ও জালালাবাদ এলাকা, সদর, দক্ষিণ সুরমা, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় প্রায় ৪০০ পাহাড়-টিলা রয়েছে। যদিও এ সংক্রান্ত কোনো সঠিক পরিসংখ্যান জেলা প্রশাসনের কাছে নেই। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় টিলার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে।
বেলা সূত্র জানায়, সিলেট মহানগর ও সিলেট সদর উপজেলায় ২০০ টিলা রয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় আরও ২০০-এর ওপরে টিলা আছে। এসব টিলার মধ্যে অনেক টিলাই সম্পূর্ণ এবং অধিকাংশ টিলা অর্ধেক ও আংশিকভাবে কেটে ফেলা হয়েছে। টিলা কেটে ফেলার কারণে ও কাটা অব্যাহত থাকায় দিনদিন ঝুঁকি বাড়ছে। ভারী বৃষ্টি হলেই এসব টিলার মাটি নরম হয়ে ধসে পড়ে এবং নিচে বসবাসকারী লোকজনের মধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে টিলা বা টিলার পাদদেশে বসবাস করছেন- কিছু জায়গায় ঘর বানিয়ে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তারা যেতে চান না। এরপরও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের বারবার বলা হচ্ছে এমন ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় না থাকার জন্য।