বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাড়ছে অবহেলাজনিত মৃত্যু

নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক, চট্টগ্রামে দায় নিচ্ছেন না কেউ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার অবহেলায় একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও দায় নিচ্ছে না কেউ। এতে সাধারণ মানুষ যেমন চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি কেউ ন্যূনতম ক্ষতিপূরণও পায়নি। এ নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে গত ১০ দিনেই এ জাতীয় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গত ১০ মে দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের স্টিল মিল বাজারে পণ্যবাহী লরি থেকে কনটেইনার ছিটকে রিকশার ওপর পড়ে পতেঙ্গার মো. ইউনুছ ও তার সন্তান রহিম ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ছাড়া রবিবার সকালে নগরের অক্সিজেন মোড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে জাহেদ আলী (৩৮) নামের এক রিকশা চালক দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।         

জানা যায়, নগরের অসংখ্য বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে পুরনো ও জীর্ণশীর্ণ তার ঝুলে আছে। নগরে অন্তত ৫০ হাজার বিদ্যুতের খুঁটিতে ঝুলছে শত শত প্রতিষ্ঠানের তার। এসব তারে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটনার আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে, বর্তমানে নগরে ৮১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পিচঢালা সড়ক রয়েছে ১ হাজার ৩৭৩টি এবং কংক্রিটের সড়ক ৩২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ১ হাজার ৩১০টি। তবে নগরের অনেক সড়কে রয়েছে খানাখন্দ। এসব সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে হেলেদুলে। বিশেষ করে বন্দর পতেঙ্গা এলাকা দিয়ে চলাচল করে পণ্যবাহী লরি ও ট্যাংকার। এসব সড়ক দিয়েও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে যানবাহনগুলো। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম বলেন, নগরের অনেক সড়ক এখন আগের চেয়ে উন্নত। মাঝে-মধ্যে সড়ক নষ্ট হলে সেগুলোর মেরামত কাজ চলমান। সড়ক নষ্ট থাকার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে এটি বলা যায় না। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, একটা মানুষের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? কেউ বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে, কেউ বা রাস্তার গর্তে পড়ে, কেউ নালায় পড়ে মারা যাচ্ছে। আবার কারও পেটে উন্নয়নকাজের রড ঢুকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসছে। এভাবে একটি সভ্য নগর চলতে পারে না। যে কাজ করলে মানুষের মৃত্যু হতে পারে এটি অবহেলাজনিত মৃত্যু। তাই এগুলো দুর্ঘটনা নয়, বলা যায়, সংস্থাগুলোর অবহেলাজনিত মৃত্যু। এ মৃত্যুর দায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নিতে হবে। তাদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার দাবিদার। টর্ট আইনে এগুলো সব হত্যাকান্ড।

জানা যায়, সড়কে গর্তে পড়ে বা বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট নগরের মুরাদপুর মোড়ে পা পিছলে নালায় পড়ে মুহূর্তেই পানির স্রোতে তলিয়ে যান ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ (৫০)। এরপর তার আর খোঁজ মিলেনি। একই বছর ৭ ডিসেম্বর নগরের চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের বিপরীতে ভূমি অফিসের সামনের ড্রেনে পড়ে নিখোঁজ হয় মো. কামাল নামে এক কিশোর। দুই দিন পর লাশ মিলে অদূরের চশমা খালে। ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর নগরের আগ্রাবাদে নালায় পড়ে নিখোঁজ হওয়ার পর লাশ উদ্ধার করা হয় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেহরিন মাহমুদ সাদিয়ার। ২০২১ সালের ৩০ জুন নগরের মেয়র গলির চশমাখালে পড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়।  প্রসঙ্গত, যখন কোনো ব্যক্তি তার দায়িত্ব কর্তব্য থেকে সরে গিয়ে কিংবা বিচ্যুতি হয়ে অন্য কারও ক্ষতিসাধন করে তখন তাকে টর্ট বলা হয়। যখনই কোনো ব্যক্তি অন্যায় কিংবা অবৈধভাবে বা বেআইনিভাবে কারও সেই অধিকার হস্তক্ষেপ করবে তখনই তাকে টর্ট বলা যাবে। এর জন্য অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি টর্ট আইন অনুযায়ী প্রতিকার পাবেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর