শনিবার, ২০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঘর সামলাতে পেরেশান বিএনপি

সিটি নির্বাচন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ঘর সামলাতে পেরেশান বিএনপি

দলের চূড়ান্ত ঘোষণা নির্বাচন বর্জনের। দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে সিটি নির্বাচনে কেউ প্রার্থী হলে দল থেকে হবেন আজীবন বহিষ্কার। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ না নিতে দলের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়েও সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু এত কঠোর নির্দেশনার পরও দলের সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়ছে না সিলেট বিএনপির। ঘর সামলাতে ‘পেরেশান’ দলের নেতারা। বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও এখনো পরিষ্কার করেননি নিজের অবস্থান। তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে বিএনপির নেতা-কর্মী ও নগরবাসীকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ২০ মে পর্যন্ত। আর এখন পর্যন্ত বিএনপির বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই রয়েছেন প্রচারণায়। কোনোভাবেই দলের নেতারা তাদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে পারছেন না। অন্যদিকে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আনোয়ারুজ্জামানের সমর্থনে বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ ও মতবিনিময় অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির অনেক আগের। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনও চলমান। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। নির্বাচনে কোনো স্তরের নেতা-কর্মীদের অংশ না নিতে দলের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিটি নির্বাচন সামনে রেখে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন সিলেট মহানগর বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। ওই বৈঠকে তারেক রহমান নির্বাচনে অংশ না নিতে দলের নেতা-কর্মীদের কঠোরভাবে বারণ করেছেন। কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তাকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং দলে ফেরার সব পথ বন্ধ থাকবে এমন হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। কিন্তু এমন কঠোর বার্তায়ও কাজ হচ্ছে না সিলেটে। সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর থেকে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তিনি নির্বাচন করবেন কি না, বিষয়টি এখনো নগরজুড়ে সর্বাধিক আলোচ্য। ঈদুল ফিতরের আগে আরিফ লন্ডন সফরে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার নেতা আমাকে একটি সিগন্যাল দিয়েছেন। সেটি গ্রিন না রেড তা সময়মতো সবাই জানবেন।’ এরপর দেশে ফিরেও তিনি একই কথা বলেন। তার এমন বক্তব্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত পান অনেকে। ১ মে শ্রমিক দলের সমাবেশে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে ঘোষণা দেন, ‘বিএনপি কেন নির্বাচন বর্জন করেছে এবং সিলেটে কোন প্রেক্ষাপটে আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি তা ২০ মে সমাবেশ করে জানাব।’ মেয়র আরিফের এমন বক্তব্যের পর নির্বাচনে তার অংশগ্রহণের বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হয়। কিন্তু সিলেটের রাজনীতিতে রহস্যপুরুষ হিসেবে পরিচিত আরিফুল হক চৌধুরী এর পর থেকে নির্বাচনের পরিবেশ, প্রশাসনের বাড়াবাড়ি, ইভিএম, দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কাসহ নানা অভিযোগ তুলতে থাকেন। তবে এমন পরিস্থিতিতে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কি না, বিষয়টি এখনো পরিষ্কার করেননি। আগামী ২০ মে রেজিস্ট্রারি মাঠে সব ওয়ার্ডের বিশিষ্টজনদের নিয়ে সমাবেশ করে তিনি তার সিদ্ধান্ত জানানোর কথা। আরিফের এমন রহস্যজনক আচরণে তার ওপর পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছেন না দলের নেতারা। শেষ পর্যন্ত আরিফ জনগণের চাপের কথা বলে নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হতে পারেন এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন বিএনপির নেতারা; যে কারণে কেন্দ্র থেকেও তাকে চাপে রাখা হচ্ছে।

নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না- এ প্রসঙ্গে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত নির্বাচনে না যাওয়ার। তাই দলীয় সিদ্ধান্ত মানলে নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে হবে। আর ব্যক্তি সিদ্ধান্তে প্রার্থী হলে দল ছাড়তে হবে। তবে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব তা ২০ মে সমাবেশ করে জানাব।’ এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন আটজন কাউন্সিলর। এদের মধ্যে কেবল ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তের কথা জানান। বাকি সাত কাউন্সিলর ইতোমধ্যে নিজেদের প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় সভা-সমাবেশ করে চলেছেন। এ অবস্থায় নিজেদের ঘর সামলাতে মারাত্মক পেরেশানিতে পড়েছেন মহানগর বিএনপির নেতারা। বর্তমান কাউন্সিলরসহ সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী ৩২ নেতাকে ইতোমধ্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে প্রার্থী হলে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার হওয়ার কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। ফোনেও দলের নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বারণ করেছেন প্রার্থী না হতে। কিন্তু নেতাদের চিঠি, ফোন কোনো কিছুই কাজে আসছে না। সিসিকের ৪২টি ওয়ার্ডে শতাধিক নেতা-কর্মী প্রার্থিতার ঘোষণা করে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজন মনোয়নপত্র সংগ্রহও করেছেন।

এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘দল করতে হলে দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ প্রার্থী হলে তার শাস্তি কী হবে তাও আগেভাগে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তারা আজীবনের জন্য বহিষ্কার হবেন। দলে ফেরার কোনো সুযোগ থাকবে না তাদের। আর আমাদের ধারণা, এ নির্বাচনে ভোট দিতে শুধু বিএনপির নেতা-কর্মী নয়, সাধারণ ভোটাররাও যাবেন না।’

 

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মতবিনিময় : সিসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সমর্থনে গতকাল গোটাটিকরে একটি কমিউনিটি সেন্টারে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। সভায় মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন।

সভায় বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা যতবার ক্ষমতায় এসেছেন ততবার দেশের উন্নয়ন হয়েছে, মানুষ শান্তিতে বসবাস করেছে। সিলেটে আওয়ামী লীগের মেয়র না থাকা সত্ত্বেও নগরীর উন্নয়নে বিএনপির মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। কিন্তু সে টাকা দিয়ে পরিকল্পিত উন্নয়ন হয়নি। তাই এবার শেখ হাসিনার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানকে বিজয়ী করে সিলেটের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর