শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

শেওলায় বাড়বে বাণিজ্য সুবিধা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

শেওলায় বাড়বে বাণিজ্য সুবিধা

সিলেটে তামাবিলের পর এবার চালু হলো শেওলা স্থলবন্দরের কার্যক্রম। শুল্ক স্টেশন থেকে স্থলবন্দরে উন্নীত হওয়ায় শেওলা দিয়ে বাড়বে বাণিজ্য সুবিধা। দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শেওলা স্থলবন্দরের ট্যারিফ নির্ধারণ করা হলে ব্যবসায়ীরা ওই বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হবেন। ফলে ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ খ্যাত সাত রাজ্যের সঙ্গে বাড়বে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য। আর এতে উপকৃত হবে উভয় দেশ। শেওলা স্থলবন্দর নিয়ে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। গত বুধবার নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে স্থলবন্দরটির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের ৩০ জুন শেওলা শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর ২২.০২ একর জমি অধিগ্রহণ করে বন্দর পরিচালনার জন্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু নানা কারণে কাজে দেখা দেয় দীর্ঘসূত্রতা। ফলে ঘোষণা হলেও স্থলবন্দর হিসেবে শেওলার কার্যক্রম শুরু হয়নি। এতদিন শুল্ক স্টেশন হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছিল এটি। অবশেষে ঘোষণার আট বছর পর গত বুধবার শেওলা শুল্ক স্টেশনটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্থলবন্দর হিসেবে চালু হলো। স্থলবন্দরটিতে অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নতুন যাত্রা শুরু করা এই স্থলবন্দরের মাধ্যমে ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্প্রসারিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। সূত্র জানায়, সিলেটের বিয়ানীবাজার সীমান্তে শেওলা স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের আসাম রাজ্যের সুতারকান্দি এলাকা। শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে প্রধানত গবাদিপশু, মাছের পোনা, মৌসুমি ফল, গম, রাসায়নিক সার, কাঠ, চুনাপাথর, পাথর, কয়লা, আদা, রসুন, পিঁয়াজ, কমলা, সাতকরা, চালসহ বিভিন্ন পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়ে থাকে। বিপরীতে রপ্তানি হয়ে থাকে- বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী, হস্তশিল্প, তাঁতপণ্য, বেতের তৈরি পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, ফার্নিচার ও মাছসহ নানা রকম পণ্য। শেওলা শুল্ক স্টেশন স্থলবন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করায় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মেঘালয়সহ পার্শ্ববর্তী ভারতের সাতটি রাজ্যের বাণিজ্য সুবিধা সম্প্রসারিত হবে। এখন ভারতের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত সাতটি রাজ্য থেকে বাংলাদেশ যেভাবে সহজে পণ্য আমদানি করতে পারবে, ঠিক তেমনি ভারতও একই সুবিধা ভোগ করতে পারবে। আমদানিকৃত পণ্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা স্থলবন্দরের স্টকইয়ার্ডে সংরক্ষণ করে রাখার সুযোগ পাবেন। তবে স্থলবন্দরের বাণিজ্য সুবিধা কাজে লাগাতে যৌক্তিকভাবে ট্যারিফ নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ সভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ বলেন, ‘স্থলবন্দর চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয় এটি সত্য। কিন্তু অনেক সময় এটি ব্যবসায়ীদের জন্য গলার কাঁটাও হয়ে দাঁড়ায়। তামাবিল স্থলবন্দরের ট্যারিফ যেভাবে অযৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে সেভাবে করা হলে শেওলা স্থলবন্দর ব্যবহারে ব্যবসীরা আগ্রহী হবেন না। দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ট্যারিফ নির্ধারণ করলে শেওলা স্থলবন্দরের বাণিজ্য সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হবে।’ ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ আরও বলেন, ‘তামাবিল স্থলবন্দরের ট্যারিফ দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের চেয়ে বেশি। তাই ব্যবসায়ীরা ওই স্থলবন্দরের সুবিধা নিতে আগ্রহী হন না। স্টক ইয়ার্ডের ভাড়া যদি অযৌক্তিক হয় তবে ব্যবসায়ীরা স্থলবন্দরের ইয়ার্ডের চেয়ে বাইরে আমদানিকৃত পণ্য রাখতে আগ্রহী হবে। তাই বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ প্রসঙ্গত, শেওলা স্থলবন্দরটি নির্মাণে প্রথম পর্যায়ে ব্যয় হয়েছে ১৩৮ কোটি টাকা। এই টাকার মধ্যে ২২ একর জমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ওপেন ইয়ার্ড, পার্কিং ইয়ার্ড, ট্রান্সশিপমেন্ট শেড, দুটি ওয়্যারহাউস, মাল্টি এজেন্সি সার্ভিস ভবন, ডরমেটরি ভবন, বন্দরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ওয়াস ব্লক ও বিশ্রামাগার, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, দুটি ডিজিটাল ওয়েটব্রিজ স্কেল নির্মাণ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর