রাজশাহীর পবা উপজেলার সদ্য বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত গ্রাম থেকে তার চাচাতো ভাইকে এনে প্রায় কোটি টাকার কাজ করাচ্ছেন। এরই মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০টি বাড়ি নির্মাণ করাচ্ছেন ৯১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে। এ ছাড়া ডরমেটরি এবং শিল্পকলা একাডেমি অফিস সংস্কারের কাজও করছেন ইউএনওর চাচাতো ভাই রাজীব রণক। ঘরগুলো নির্মাণের ইট একটি ভাটা থেকে নেওয়া হয়েছে। পুকুর খননের অনুমতি দিয়ে ঘুষ হিসেবে ইটগুলো নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসার পর বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাতকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বদলি করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তে কমিটি করেছেন বিভাগীয় কমিশনার। উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওই ঘর নির্মাণ দরপত্র প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারের মাধ্যমে হয় না। এটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনই কাজটি করে। এ কমিটির আহ্বায়ক ইউএনও। আর সদস্যসচিব থাকেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। এ ছাড়া কমিটিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের থাকার কথা। কিন্তু কমিটি ছাড়া একাই চাচাতো ভাইকে নিয়ে কাজ করেছেন আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত। নির্মাণ শেষ হতে চললেও বদলির আগে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কোনো সভাও করেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পবা উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় অনেক আগেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০টি বাড়ি নির্মাণ হয়েছিল। ঘরগুলো ছিল টিন দিয়ে তৈরি। এগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় ইট দিয়ে বাড়ি তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের অর্থ দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রতিটি বাড়ির জন্য বরাদ্দ ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। গত অর্থবছরের জুন মাসে এ কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে কাজ প্রায় শেষের দিকে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউএনও আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাতের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলায়। প্রায় এক বছর আগে তিনি পবার ইউএনও হিসেবে যোগ দেন। এর কিছু দিন পরই তিনি গ্রাম থেকে চাচাতো ভাই রাজীব রণককে আনেন। রণক উপজেলা ক্যাম্পাসে ইউএনওর সরকারি বাসভবনেই থাকতেন। ইউএনও সব নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ তার চাচাতো ভাইকে দিয়েই করাতেন।
ইউএনওর চাচাতো ভাই রণক জানান, ঘরগুলো নির্মাণের কাজ তিনিই করছেন। এ কাজের সঙ্গে অন্য কেউ নেই। নিম্নমানের কাজের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা কর্মকর্তারা দেখবেন।’ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০টি ঘর নির্মাণের বিষয়ে কোনো সভা হয়েছে কি না জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু বাশির কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি বাদ দিয়ে চাচাতো ভাইকে দিয়ে কাজ করানোর বিষয়ে সদ্য বিদায়ী ইউএনও আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত জানান, ‘এটা সত্য নয়। কাজ কমিটির মাধ্যমেই করা হচ্ছে। চাচাতো ভাই কাজ করবে কেন? ও কিছু দিনের জন্য বেড়াতে এসেছে। কাজ করছে মিস্ত্রি।’
বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘কাজটা যদি ঠিকাদারের মাধ্যমে হতো এবং ইউএনওর চাচাতো ভাই যদি যোগ্যতাসম্পন্ন বৈধ ঠিকাদার হতেন তাহলে কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু যেহেতু কাজটা দরপত্র প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারের মাধ্যমে হচ্ছে না, সেহেতু তিনি চাচাতো ভাইকে দিয়ে কাজ করাতে পারেন না। ইতোমধ্যে ইউএনওকে বদলি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’