সাভারে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জেনারেটর ব্যবহার করে কিছু কারখানা উৎপাদন চালু রেখেছে। তবে পাঁচটি কারখানায় ছুটি দেওয়া হয়েছে। গত পরশু দুপুরের দিকে ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পাওয়ার প্লান্টের গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এতেই এ সংকট তৈরি হয়।
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের দ্বিতীয় দিনে গতকাল ৭০ ভাগ কারখানা উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলেও এখনো উৎপাদন বন্ধ রয়েছে ৩০ ভাগ কারখানায়। জানা গেছে, তিতাসের কাছ থেকে গ্যাস নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরবরাহ করে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। তবে বিল বকেয়া সংক্রান্ত কারণে সোমবার দুপুরে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক শরীফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সকালেও বিদ্যুৎ ছিল না। সকাল ৯টা পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) কাছ থেকে অল্প পরিমাণের সাপোর্ট পাওয়া যায়, যা দিয়ে কারখানাগুলো চালানো সম্ভব হয়নি। কিছু কারখানা জেনারেটর ব্যবহার করে কাজ করছে। কারখানা চালু করতে না পারায় পাঁচটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আরইবি বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়ে দেয়। ১১টার দিকে আমরা ২৫-২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাই। এতে প্রায় ৭০% কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আরইবি থেকে ৩৫ মেগাওয়াট পাব বলে আশা করছি। সেটি পেলে ৯০% সমাধান হয়ে যাবে। তবে তারা এটি নিরবচ্ছিন্নভাবে দিতে পারবে না। ফলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। এই পরিস্থিতির প্রভাব সম্পর্কে তিনি আরও বলেন তিতাসের সঙ্গে ইউনাইটেডের বকেয়া নিয়ে দীর্ঘদিনের সমস্যা। এক পক্ষ বলছে বকেয়া নেই, অপর পক্ষ বলছে বকেয়া রয়েছে। এই সমস্যায় ভোগান্তিতে পড়েছে ডিইপিজেডের কারখানাগুলো। এতে শ্রমিকদের চাকরির ঝুঁকি রয়েছে। উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের শিপমেন্টের ক্ষেত্রে তাদের কাটলাইন, ডেডলাইন ফেল করবে। সময়মতো রপ্তানি করতে পারবে না।
এর আগে, ডিইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানায় সোমবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ না থাকায় সব কারখানায় কর্মীদের ছুটি দেওয়া হয়। ডিইপিজেডে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মমতাজ হাসান বলেন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হচ্ছে। ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক আখতারুজ্জামান লস্কর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের গ্যাস বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তিতাস কর্তৃপক্ষ। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ডিইপিজেড ও ইউনাইটেড পাওয়ার প্লান্টের কর্মকর্তারা আমাদের কাছে এলে আমরা ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করি। সকালে পুনরায় আরও ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এরপর সব কারখানার উৎপাদন শুরু হয়। তিনি বলেন যে ৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা ডিইপিজেডে সরবরাহ করেছি এর বিপরীতে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড থেকে আনা হয়েছে তাই বিদ্যুৎ সংকটে পড়তে হবে না।
সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন জানান, ইউনাইটেডের কাছে গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্যাস লাইন বন্ধ রাখা রয়েছে।