বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, পুরো দেশ অশান্তিতে ভরে উঠেছে। অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে। আপনারা সেদিকে না তাকিয়েই কি নিজেদের মতো দেশ চালাবেন? কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল বা কোনো আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে আপনাদেরও কিন্তু জনগণ ধরে ফেলবে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের প্রকাশনা ও প্রচার সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। এতে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্যসচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুন, সাবেক ছাত্রনেতা মেহবুব মাসুম শান্ত, ওমর ফারুক কাওসার, ছাত্রদল নেতা ডা. তৌহিদ আওয়ালসহ উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরামের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দলের এই মুখপাত্র বলেন, আজকে জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, ’৭১ এবং স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললে সাম্যদের জীবন চলে যায়। অর্থাৎ দেশের পক্ষে, যারা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, যারা জাতীয় সংগীতের পক্ষে তাদের জীবন চলে যায়। ছাত্রদল নেতা সাম্যকে জাতীয় সংগীত আর স্বাধীনতার কথা বলায় হত্যা করা হয়েছে। আমি এ জন্যই বলেছি, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো না কোনো রাজনৈতিক কারণ আছে।
রিজভী বলেন, ‘৫ আগস্টের পর এক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা সবাই একটু স্বস্তিতে থাকতে চেয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিক্ষক ছাত্ররা নির্বিঘ্নে ক্লাসে যাবে, ক্লাস থেকে বের হবে। এখন কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অরাজক পরিস্থিতি? তরুণ ছাত্রের লাশ ক্যাম্পাসের মধ্যে, হত্যাকাণ্ড চলছে, রক্ত ঝরছে। এখন তো আর আওয়ামী দোসররা নেই। তাহলে কেন লাশ পড়বে? গত মঙ্গলবার রাত ১২টার সময় ছাত্রদল নেতা সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে।
কী অন্যায় করেছিল সাম্য? এখানে রাজনৈতিক কারণ আছে। তিনজন ভবঘুরে সাম্যকে কেন হত্যা করবে? কয়েক দিন আগে শাহবাগে জাতীয় সংগীত বন্ধের জন্য একটা আন্দোলন চলছিল। তার বিরুদ্ধে এবং জাতীয় সংগীতের পক্ষে সে ফেসবুকে একটা পোস্ট করেছে। এটাই কী সেই কারণ?’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আমরা দেখেছি ফ্যাসিবাদী আমলে পার্শ্ববর্তী দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আবরারকে হত্যা করা হয়। আজকে জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, ’৭১ এবং স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললে তার জীবন চলে যায়। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ আছে।
পুলিশকে উদ্দেশ করে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, আপনারা ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখুন। ভবঘুরেদের গ্রেপ্তার করেছেন, মানুষ এসব ভণ্ডামি সহজভাবে নেয় না। আজকের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হাসিনা নেই, দোসররা নেই, রক্তপাত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তার পরও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। জানুয়ারি মাসে তফাজ্জল নামে একজন ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। এসব কারা করেছে? রিজভী বলেন, ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে গিয়েছে ছাত্রদলের নেতারা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মারা গেছে। আপনি বিরক্ত হয়েছেন, ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আপনি তুই-তোকারি করেছেন ছাত্র নেতাদের। আপনি শুনতে চান না। কারণ, সাম্য ছাত্রদল করে। আপনার রাজনৈতিক চিন্তা দর্শন কী- কী আপনার পরিচয়, আপনি কোন দলের সমর্থক- সেটা আমরা ইতোমধ্যে জেনে ফেলেছি। যারা জাতীয়তাবাদের পক্ষে ওখানে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে ছাত্র সংগঠন করে সেটা আপনি পছন্দ করেন না। আপনার উচিত ছিল প্রথমে সেই লাশ দেখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। ভাইস চ্যান্সেলররা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বিশেষ দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে নেমে যান, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনোই শান্তি বয়ে আনবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেটা আমরা জানি না। আপনাদের আমরা সমর্থন করেছি, এখনো করে যাচ্ছি। কিন্তু এনসিপি যখন যমুনার দিকে যায়, তখন তাদের সাদরে বরণ করেন। তিন-চার দিন আগে দেখলাম আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে তারা গেলেন, তাদের সাদরে বরণ করলেন। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা তাদের আবাসনের জন্য গেল, তখন আপনারা তাদের উপহার দিলেন লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড। আপনারা তো সুশীল সমাজের লোক। কিন্তু আপনাদের আচরণের মধ্যে এই দ্বিচারিতা কেন? আপনাদের আচরণের মধ্যে এই বিভাজন কেন? এগুলো বাদ দিয়ে সঠিক পথে দেশ পরিচালনা করুন।