জুলাই আন্দোলনের শহীদদের বিক্রি করে কেউ কেউ রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, এক দলকে কোলে করে রাখবেন, আরেক দলকে কাঁধে রাখবেন-বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার প্রোগ্রাম করবেন না। আমরা সহযোগিতা করছি, দ্রুত নির্বাচন দিন।
গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত মৌন মিছিলে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এই মৌন মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মির্জা আব্বাস দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এই কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু।
পরিচালনা করেন সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন। কেন্দ্রীয় নেতা মীর শরফত আলী সপু, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, মহানগর দক্ষিণ বিএনপি নেতা হাবিবুর রশিদ হাবিব, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, আরিফা রুমা, নাদিয়া পাঠান পাপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিকাল ৫টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মৌন মিছিল শুরু হয়। মিছিলের অগ্রভাগে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। পরে এটি কাকরাইল মোড়, মৌচাক হয়ে রামপুরার আবুল হোটেলের সামনে গিয়ে শেষ হয়। কর্মসূচির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘শহীদদের জন্য মাঝে মাঝে আমার খুব আফসোস হয়, আমার খুব কষ্ট হয়। আমিও আন্দোলনের মাঠে ছিলাম, গুলির মুখেই ছিলাম, এই মঞ্চেই ছিলাম। আমার মনে হচ্ছে আমার যে ভাইগুলো শাহাদাতবরণ করেছেন তারা যদি আজ কেউ একজন বেঁচে থাকতেন কিংবা তারা যদি বুঝতে পারতেন যে তাদের শাহাদাতবরণকে নিয়ে, তাদের লাশ নিয়ে তাদের আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে যেভাবে আজকে ব্যবসাবাণিজ্য চলছে, রাজনৈতিক ব্যবসা চলছে, তারা লজ্জা পেতেন। তারা দেখতে পেতেন, তারা যে কারণে প্রাণ দিয়েছিলেন সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ওই ঘটনাগুলোকে নিয়ে বিশেষ কয়েকটি দল রাজনীতি করছে এবং তাদের বিক্রি করে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা করছে। কিছু হলেই বলেন আন্দোলনের শহীদ, আন্দোলনের শহীদ। আরে ভাই জুলাই আন্দোলনের শহীদদের সম্মান দেখান। তারা তো কোনো একক ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেয় নাই। তারা সারা দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য জীবন দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সংগ্রাম করেছি, যুদ্ধ করেছি, জেলে গিয়েছি। কিন্তু সেগুলোর প্রতিদান নেই, আমরা চাইও না। কিন্তু আজকে তাদের ভিত্তি করে একটি দল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একজন তথাকথিত পীর সাহেব বলেছেন, জামায়াতের ছোঁয়া যেখানে লাগবে সেই জায়গা পচে যাবে। মনে আছে কি আপনাদের কথাটা? তিনি আজ জামায়াতের কোলে উঠে বসেছেন। আবার যেই জামায়াতের নেতারা একসময় বিএনপির কাঁধে পাড়া দিয়ে মন্ত্রী হয়েছেন, একসময় আওয়ামী লীগের কাঁধে পাড়া দিয়েও তারা মন্ত্রী হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে তারা দালালি করেছে, তাদের বিক্রি করেছে।’
বিএনপিকে অনেকে আওয়ামী লীগের কাতারে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাদের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমি ভাইদের বলব, দয়া করে জিহ্বায় একটু লাগাম দিন। আপনাদের ভালো হবে, আমাদের ভালো হবে। এমন বাজে কথা বলবেন না, যা মানুষের রক্তে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে। বিএনপি ঝগড়ার দল নয়, বিএনপি গণতন্ত্রকামী দল, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করে।’