বিগত সময়ে প্রশাসন ক্যাডারের বেশির ভাগ কর্মকর্তা দায়িত্ব এড়িয়ে দলীয় কর্মীতে পরিণত হয়েছিল। যার ফলে বারবার ডামি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নতুন প্রজন্ম চায়, পেছনের ভ্রান্তি ভুলে জনগণের হয়ে আমলারা কাজ করুন। রাষ্ট্রের দাস হয়ে উঠুন তারা। তাহলেই উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। গতকাল রাজধানীর ইস্কাটনে বিয়াম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিব সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর নিয়াজ আহমেদ খান, গণ অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ও রমজান আলী, সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আবদুস সাত্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দা লাসনা কবীর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রফেসর ড. শাফিউল ইসলাম। মানুষের সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডারের অবিশ্বাসের দেয়াল তৈরি হয়েছে।
এটি ভাঙা অতি জরুরি বলে মনে করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বাংলাদেশ কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ সানোয়ার ভূইয়া। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো ভঙ্গুর পরিস্থিতির মধ্যে বিগত ১৫ বছর চলেছিল। এ সময় রাষ্ট্রের ২৮ লাখ কোটি টাকা চোখের সামনে পাচার হয়েছে। আমরা বিচার করতে পারিনি। আমাদের শিক্ষা কারিকুলাম বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠেছে। এর জন্য আমাদের রাষ্ট্রীয় জরিপ ব্যবস্থার দায় সবচেয়ে বেশি।
তিনি আরও বলেন, জনগণের প্রত্যাশার সিভিল সার্ভিস হওয়া উচিত। প্রত্যেক সেবাপ্রার্থী সঠিক সময়ে সেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন। সরকারি চাকরিজীবীদের জনগণের সঙ্গে সংযোগ রাখতে হবে। তাহলে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন ফিরে আসবে না। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন আগামী নির্বাচনের আগেই উৎসবমুখর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা তৈরিতে সরকারের আমলাদের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। বিগত সময়ে প্রশাসনের ক্যাডাররা তার দায়িত্ব এড়িয়ে দলীয় কর্মীতে পরিণত হয়েছেন। ফলে বারবার ডামি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নতুন প্রজন্ম চায় পেছনের ভ্রান্তি ভুলে গিয়ে জনগণের হয়ে আমলারা কাজ করুন। রাষ্ট্রের দাসত্ব করুন আমলারা।
শহীদ আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী বলেন, আবু সাঈদের বিচার এত দিনে পাওয়ার কথা থাকলেও এখনো সেটি হয়নি। আমার বাবা বলেন, ‘আমার সন্তানের চাকরি দেখতে পারিনি। অন্তত মৃত্যুর পরেও যেন শুনি আমার ছেলে হত্যার বিচার হয়েছে।’
শহীদ আনাসের মা সানজিদা খান দিপ্তী বলেন, সবার কাছে ফ্যাসিস্ট মুক্তির এক বছর হলেও আমাদের পরিবারে সন্তান হারাবার এক বছর পূর্ণ হলো। আমার আনাস নিষেধ অমান্য করে ঘরে চিঠি লিখে আন্দোলনে গিয়েছিল। আমাদের সন্তানরা যে স্বপ্ন নিয়ে জীবন দিয়েছে আপনারা তা বাস্তবায়ন করুন। আন্দোলনে যাওয়ার পূর্বে আমার সন্তান যে চিঠি লিখে গিয়েছে তা পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
শহীদ মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, আমলারাই হাসিনাকে খুনি বানিয়েছে। আমলাদের পৃষ্ঠপোষকতায় জুলাই তৈরি হয়েছে।