ক্যানসার নির্ণয়ে অতি জরুরি পেট-সিটি স্ক্যান পরীক্ষার সুযোগ নেই বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে। এর জন্য রোগীকে ঢাকা বা দেশের বাইরে দৌড়াতে হয়। আর্থিকভাবে সক্ষম রোগীরা তা পারলেও গরিব-অসহায়রা এ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন। তবে স্বাধীনতার সাড়ে পাঁচ দশক পর চট্টগ্রামে পেট সিটি ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পেট-সিটি স্ক্যান মূলত শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং টিস্যুগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে। এটি বিশেষ ধরনের রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা, যা ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ও মূল্যায়নে ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য পরীক্ষার চেয়ে এটি আরও বেশি বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করে। এটি ক্যানসারের উপস্থিতি, অবস্থান এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ছে কি না তা চূড়ান্তরূপে শনাক্ত করতে পারে, রোগের পর্যায়ক্রম নির্ধারণে সাহায্য করে। জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সে (ইনমাস) ক্যানসার নির্ণয়ের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পেট-সিটি (পজিট্রন ইমিশন টোমোগ্রাফি) ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। আগামী বছরের শুরুতে এটি চালু করার কথা।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীনে সাইক্লোট্রন (রেডিও আইসোটোপ উৎপাদনকারী মেশিন) সুবিধাসহ ল্যাবটি স্থাপিত হচ্ছে। এটি চালু হলে ক্যানসার চিকিৎসায় খুলবে নতুন দিগন্ত। ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য ঢাকা বা দেশের বাইরে দৌড়াতে হবে না চট্টগ্রামবাসীকে। বাঁচবে অর্থ ও সময়।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের আওতায় ছয় তলাবিশিষ্ট ভবন, মলিকুলার ল্যাব ও সাইক্লোট্রন সুবিধাসহ পেট সিটি মেশিন রয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে মেশিনগুলো স্থাপনের কাজ। ইতোমধ্যে ভবনের বেজমেন্টে সাইক্লোট্রন মেশিন স্থাপনের জন্য বাংকার নির্মাণ করা হয়েছে।
ইনমাস চট্টগ্রামের পরিচালক অধ্যাপক ডা. পবিত্র কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘চট্টগ্রামে পেট-সিটি স্ক্যান ল্যাব স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী বছরের শুরুর দিকে এটি চালুর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। সাইক্লোট্রন সুবিধাসহ ল্যাবটি চালু হলে ক্যানসার রোগীরা এর বহুমুখী সেবা পাবে। রোগীদের অর্থ সাশ্রয় হবে। সঙ্গে কমবে ভোগান্তি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বেসরকারি পর্যায়ে পেট-সিটি পরীক্ষায় খরচ হয় ৫০-৬০ হাজার টাকা। সরকারি পর্যায়ে চালু হলে সেই খরচ নেমে আসবে অর্ধেকে। বর্তমানে এখানে বোন স্ক্যান, থাইরয়েড স্ক্যান, প্যারাথাইরয়েড স্ক্যান ও র্যানোগ্রাম করা হচ্ছে।’
জানা যায়, বর্তমানে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (নিনমাস) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ইনমাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাস, রাজধানীর অদূরে সাভার বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে পেট-সিটি স্ক্যান করা হয়। ঢাকায় আরও কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে এ পরীক্ষা করা হয়। তবে তা বেশ ব্যয়বহুল।