সরাসরি সম্প্রচারের জন্য যেই ক্লিনফিড ফ্রিতে পাওয়ার কথা সেটি প্রায় ১০০ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। আইনের তোয়াক্কা না করে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলায় এ ব্যয় করা হয়েছে। ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের ক্লিনফিড তমা কনস্ট্রাকশনের কাছ থেকে ক্রয় করেছিল বিটিভি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সে সময় বিটিভিকে ওই ক্লিনফিড কিনতে বাধ্য করা হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সে সময় বিটিভির উপ-মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ। তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পরিচালক (সেলস) হিসেবেও দায়িত্বে ছিলেন। তাসমিনা বর্তমানে উপ-মহাপরিচালক (বার্তা) হিসেবে কর্মরত। জানতে চাইলে ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ওই ক্লিনফিড বিনামূল্যে পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা তৎকালীন সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে ক্রয় করেছিলাম। বিগত দিনে বিনামূল্যেই বিটিভি ক্লিনফিড পেয়ে এসেছে। তবে ওই সময় আমাদের কিনতে বাধ্য করা হয়েছিল।
জানা গেছে, দেশে কোনো কোম্পানি আন্তর্জাতিক খেলার লাইভ বেসরকারি চ্যানেলে প্রচার করলে বাধ্যতামূলকভাবে রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম বিটিভিকে ফ্রিতে ক্লিনফিড দিতে বাধ্য থাকবে। কিন্তু কীভাবে তমা কনস্ট্রাকশন ৯৮ কোটি টাকায় তা বিটিভির কাছে বিক্রি করে? ২০২২ সালে ডেস্ক অফিসার হিসেবে আজগর আলী ক্লিনফিড ক্রয়ে তাসমিনাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন। এ বিষয়ে বিটিভির পরিচালক (ইন্টারন্যাশনাল ও ক্রয়-বিক্রয়) আজগর আলী বলেন, ক্লিনফিডের বিষয়ে ২০১৫ সালের একটি প্রজ্ঞাপন ছিল, কিন্তু সেই প্রজ্ঞাপনের আওতায় বিটিভি কোনো কালেই ফ্রিতে ক্লিনফিড পায়নি। আর ওই প্রজ্ঞাপনের আওতায় কেন পায়নি তার জবাব তৎকালীন মন্ত্রী, সচিব এবং মহাপরিচালক (ডিজি) দিতে পারবেন।
২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সব আন্তর্জাতিক খেলা বাংলাদেশে সরাসরি সম্প্রচারের জন্য যে টিভি চ্যানেল কিংবা চ্যানেলসমূহ স্বত্বাধিকার অর্জন করবে উক্ত চ্যানেল বা চ্যানেলসমূহ প্রত্যেকে বিটিভিকে বিনামূল্যে ক্লিনফিড প্রদান করবে। আর বিটিভি সুবিধাজনক যে কোনো একটি টিভি চ্যানেল থেকে ক্লিনফিড গ্রহণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে বিটিভিতে খেলা প্রচারের জন্য খেলা স্বত্বাধিকারী বা ক্লিনফিড প্রদানকারী টিভি চ্যানেলকে বিজ্ঞাপন সময় বরাদ্দ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। আর বিটিভিকে ক্লিনফিড না দিয়ে কোনো টিভি চ্যানেল আন্তর্জাতিক খেলা বাংলাদেশে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে না।
২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিটিভির মহাপরিচালক ছিলেন সোহরাব হোসেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়। ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন মকবুল হোসেন এবং ১ নভেম্বর থেকে হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আর ওই সময় মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ড. হাছান মাহমুদ। তবে এদের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের স্বাক্ষরিত ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির একটি সার-সংক্ষেপে বলা হয়, তমা কনস্ট্রাকশনের কাছ থেকে পিপিআর-২০০৮ অনুসরণ করে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৯৮ কোটি টাকা মূল্যে বিশ্বকাপ ফুটবলের টেলিভিশন প্রচারস্বত্ব ক্রয়ের বিষয়ে নীতিগত সম্মতির জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। তিনি তাতে সদয় স্বাক্ষর করেন। আর ক্রয়ের বিষয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদয় বিবেচনার জন্য সারসংক্ষেপ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর প্রেরণ করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রস্তাবটি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরিবর্তে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করতে অভিমত ব্যক্ত করেন। সে অনুযায়ী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বিবেচনার জন্য সারসংক্ষেপ প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করেন।