‘স্বাধীনতা তুমি রোদেলা দুপুরে মধ্য পুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার’ কবিতার এমন পঙ্ক্তিতে স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন নাগরিক কবি শামসুর রাহমান। কবিতায় তুলে ধরেছিলেন রাষ্ট্র ও সমাজের অসংগতি। প্রেম ও মুক্তিচেতনা তাঁর কবিতার অন্যতম বিষয়। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি। আজ ২৩ অক্টোবর তাঁর ৯৭তম জন্মদিন। ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার মাহুতটুলীতে জন্ম গ্রহণ করেন শামসুর রাহমান। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে সাহিত্যের ভুবনে আলো ছড়াতে শুরু করেন এই নাগরিক কবি। নগরজীবনের নানান অনুষঙ্গ তাঁর কবিতায় ছিল প্রাণবন্ত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর লেখা তাঁর দুটি কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ সময়োত্তীর্ণ কাব্যিক দলিল। ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’। ষাটের দশকে প্রকাশিত কবির উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো ‘রৌদ্র করোটিতে’, ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’, ‘নিরালোকে দিব্যরথ’ ও ‘আমি অনাহারী’। ‘বন্দিশিবির থেকে’ (১৯৭২) কাব্যগ্রন্থটি তাঁকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যায়। কবিতা লেখার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ার গড়েছিলেন তিনি। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে মর্নিং নিউজে সাংবাদিকতার মাধ্যমে পেশাগত জীবনে প্রবেশ ঘটে কবির। এরপর রেডিও পাকিস্তানে অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৬৪ সালে সরকারি পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তানের (স্বাধীনতা উত্তর দৈনিক বাংলা) সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
পরে দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদকও নিযুক্ত হন। জীবদ্দশায় শামসুর রাহমানের ৬৬টি কাব্যগ্রন্থ, চারটি উপন্যাস, একটি প্রবন্ধগ্রন্থ, একটি ছড়ার বই ও ছয়টি অনুবাদগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।