গ্রিসে করোনভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে দেশটির পুলিশ প্রশাসন। ক্র্যাম স্কুল, সিনিয়র সেন্টার, ক্যাফে, হেয়ারড্রেসার সেলুন বন্ধ করার আদেশের পর বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত দেশজুড়ে ৪৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রিক পুলিশের এক বিবৃতি অনুসারে, ৪৫ জন অপরাধী শপিং মলের অভ্যন্তরে ক্র্যাম স্কুল, হেয়ারড্রেসার্স এবং বিউটি সেলুন, পৌরসভার সিনিয়রদের কেন্দ্র, ক্যাফে-কাফেনিও, ইলেকট্রনিক আইটেমের দোকানগুলো খোলা রেখেছিল।
১২ মার্চ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তার মধ্যে ১২ জন আতিকিতে, পশ্চিম গ্রিসে ৬ জন, থেসালিতে ৬ জন, ৫ জন পশ্চিম ম্যাসেডোনিয়াতে, পূর্ব ম্যাসেডোনিয়া এবং থ্রেসে, ৩ জন ক্রিটে, দক্ষিণ এজিয়ানে ৩ জন, ২ জন পেলোপনিসে, ২ জন এপিরাস এবং থেসালোনিকিতে ১ জন।
তাদের দুই হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হবে এবং ৩-৫ বছরের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে।
শনিবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বিস্তার রোধ ও সীমাবদ্ধ করার জন্য ব্যবস্থার লঙ্ঘন শনাক্ত করতে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রয়েছে।
নাগরিক সুরক্ষা মন্ত্রী মিশালিস ক্রিসোচাইডিস তার এক বিবৃতিতে বলেন “আমরা দায়িত্বশীল মনোভাবের অবস্থানে রয়েছি। আমাদের সবাইকে এটি বুঝতে হবে। প্রত্যেককেই নিজেকে রক্ষা করতে হবে। তারা এভাবেই নিজের লোক এবং তাদের সহ-মানবদের সুরক্ষা দিতে হবে।
সরকারের সিদ্ধান্তগুলো কঠোরভাবে সবাইকে অনুসরণ করে করতে হবে।
“যারা মেনে চলেন না তাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে তাদের এই অধিকার নেই, এই আচরণ জনসাধারণের ঝুঁকিতে নিয়ে যেতে পারে । আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
গ্রিসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার সকালে আরও দুজন করোনভাইরাস রোগীর মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছে। এই পর্যন্ত গ্রিসে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৩ জনে দাঁড়িয়েছে। তারা দু’জনই পশ্চিম ম্যাসিডোনিয়া এবং জাকিনথোস দ্বীপে বসবাস করতেন।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন ৯০ বছর বয়সী ব্যক্তি যিনি পশ্চিম ম্যাসিডোনিয়ার টলেমাইডা হাসপাতালের আইসিইউতে কয়েকদিন ধরে ভর্তি ছিলেন। একই হাসপাতালে, তার দুই আত্মীয়ও কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের প্রমাণ মিলেছে।
দ্বিতীয় ভুক্তভোগী ব্যক্তি ৬৬ বছর বয়সী, তিনি যাকিনথোস দ্বীপের একটি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার হতে ভর্তি ছিলেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের মতে, ভারী লক্ষণ নিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, শনিবার ভোরে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে এবং তার হার্ট অ্যাটাক হয়। চিকিৎসকদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও লোকটি মারা যায়। উনার পূর্বে থেকেই হার্টে সমস্যা ছিল।
গ্রিসের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল ইআরটি টিভি জানিয়েছে, দু’জনই ইসরায়েল ও মিশরে ভ্রমণকারী তীর্থযাত্রীদের সাথে যুক্ত ছিলেন।
গ্রিসে করোনাভাইরাস এর প্রথম শিকার ছিলেন ৬৬ বছর বয়সী এক ইসরায়েল ফেরত তীর্থযাত্রী, যিনি বৃহস্পতিবার পাত্রাস বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আইসিইউতে বেশ কয়েকদিন লড়াই করে মারা যান।
শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত গ্রিসে ১৯০টি নিশ্চিত করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়েছে।
গ্রীসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২৭০০ জনের করোনাভাইরাস পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে গত ৪৮ ঘণ্টায় ১ হাজারেরও বেশি মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
দেশটিতে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সকল স্কুল, জাদুঘর এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো বন্ধসহ একাধিক বিধিনিষেধমূলক পদক্ষেপ প্রয়োগ করেছে দেশটির সরকার।
শুক্রবার সরকার ক্যাফে, বার এবং রেস্তোঁরাগুলো বন্ধ করে আরও কঠোর ব্যবস্থা আরোপ করেছে।
এদিকে পেলোপনিজের পাইর্গোসের এক ব্যক্তিকে শুক্রবার “সন্দেহজনক” হিসাবে কোন ভাইরাসের পরীক্ষার জন্য সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যখন তাকে বলা হয়েছিল যে তাকে করোনভাইরাস পরীক্ষা করতে হবে, তখন তিনি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/কালাম