প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে প্রাদুর্ভাবে যখন গোটা বিশ্ব কাঁপছে, তখন উল্টো পথে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেন।
এই ভাইরাসের কারণে। ইউরোপের বেশির ভাগ দেশই এখন লকডাউন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নাগরিকদের ওপর আরোপ করা হয়েছে কঠোর নিয়মকানুন। নিয়ম না মানলে রয়েছে শাস্তির বিধানও। তবে সুইডেনের পরিস্থিতি একদমই আলাদা। দেশটিতে রেস্তোরাঁ-পানশালা সবই খোলা, স্কুল-খেলার মাঠও বন্ধ নেই।
কোভিড-১৯ মহামারী ঠেকাতে সুইডিশ সরকার নির্ভর করছে জনগণের স্বাধীন ইচ্ছার ওপরেই। অর্থাৎ সরকার আশা করছে, সংক্রমণ এড়াতে দেশটির নাগরিকরা নিজেরাই দায়িত্বশীল আচরণ করবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম মেনে চলবে।
সুইডেনের এই অবস্থান নিয়ে বিতর্কও কম হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো বলেই বসেছেন, সুইডেন হার্ড ইমিউনিটি অনুসরণ করছে, আর এমন নীতি নেওয়ার কারণে দেশটি শোচনীয়ভাবে ভুগবে।
তবে সুইডেন সরকার তাদের নীতিতে এখন পর্যন্ত অটল রয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আ্যন লিনডে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা বলেছেন তা ঠিক নয়, সুইডেন মোটেও হার্ড ইমিউনিটি পদ্ধতি অনুসরণ করছে না।
উল্লেখ করা যেতে পারে, হার্ড ইমিউনিটি হল এমন একটি পদ্ধতি যেখানে বেশির ভাগ জনগণকে ভাইরাসটি দ্বারা সংক্রমিত হতে দেওয়া হয়, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের ছাড়া। একটা পর্যায়ে অধিকাংশ মানুষের দেহে ভাইরাস প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
আ্যন লিন্ডে বলছেন, সুইডিশ সরকার সরাসরি লকডাউনের পরিবর্তে দায়িত্বটা দেশের নাগরিকদের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছে।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সুইডেন সরকারের এই নীতি ভালোভাবেই কাজ করছে বলেই মনে করেন দেশটির সরকারি মহামারী বিশেষজ্ঞ আ্যন্ডার্স টেগনেল।
এখন পর্যন্ত দেশটিতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা হাজার পার হয়নি। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স কিংবা ইতালিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। তবে সুইডেনের অন্যান্য প্রতিবেশী নরওয়ে এবং ডেনমার্ক, যারা প্রথম থেকেই কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে তাদের দেশে মৃতের সংখ্যা আরও কম।
লকডাউন ঘোষণা না করলেও ১৬ মার্চ থেকে সুইডেন সরকার সবাইকে নিয়মিত হাত ধুতে উৎসাহ দিয়ে আসছে, যাদের পক্ষে সম্ভব তাদেরকে বাড়ি থেকেই কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছে, অসুস্থ বোধ করলে বাড়িতেই থাকতে বলছে। ২৪ মার্চ থেকে রেস্তোরাঁগুলোতে ভিড় না করার নতুন নির্দেশ দেওয়া হয়, তবে একবারে বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। সেই সাথে, সত্তোরোর্ধ্ব নাগরিকদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে তারা যেন ঘরেই থাকে। যতটুকু সম্ভব সামাজিক মেলামেশা এড়িয়ে চলে। সূত্র: সিএনএন
বিডি প্রতিদিন/কালাম