করোনাভাইরাসে প্রাণ হারানো সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন কার মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছিলেন তা এখনও জানা যায়নি। কার সংস্পর্শে গিয়ে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন তা এখনও জানতে না পারায় সিলেটবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে এক অজানা আতঙ্ক। ডাক্তার মঈনকে করোনা ছড়ানো ব্যক্তি এখনও শনাক্ত না হওয়ায় ওই ব্যক্তি সিলেটের আরও মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটাতে পারেন- এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, ডা. মঈনের আগে বা পরে সিলেটে আর কোনো করোনা আক্রান্ত রোগীও শনাক্ত হননি। না ফেরার দেশে চলে যাওয়া এই ডাক্তারকে করোনা ছড়ানো ব্যক্তি এখনও শনাক্ত না হওয়ায় ওই ব্যক্তি আরও মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটাতে পারেন- এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও দায়িত্বশীলরা।
গত ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন ডা. মঈন উদ্দিন। প্রথমদিকে প্রবাসী স্বজনদের মাধ্যমে ডা. মঈন করোনা সংক্রমিত হতে পারেন বলে ধারণা করেছিলেন সিলেটের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু পরবর্তীতে ডা. মঈনের প্রবাসী কোনো স্বজন দেশে আসার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে- কোনো রোগীর মাধ্যমেই মঈন সংক্রমিত হতে পারেন। ডা. মঈন আক্রান্ত হওয়ার পর তার পরিবার ও কর্মস্থলের ১২ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। তবে তাদের কারও শরীরেও করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ফলে কার মাধ্যমে সংক্রমিত হলেন ডা. মঈন- শঙ্কাময় এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, কীভাবে তিনি সংক্রমিত হয়েছেন এটা শনাক্ত করা খুব কঠিন। আমরা তার পরিবার ও কর্মস্থলের ১২ জনকে টেস্ট করিয়েছি। এদের কারও করোনা পজেটিভ ধরা পড়েনি। এছাড়া এই সময়ে সিলেটে আর কোনো রোগীও শনাক্ত হয়নি। ডা. মঈন সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের বাইরে যাননি, তার কোনো প্রবাসী স্বজনও দেশে আসেননি। ফলে তিনি কীভাবে আক্রান্ত হয়েছেন তা বলা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলছেন, ডা. মঈন ৩০ মার্চ থেকেই তার ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে তিনি সোবহানীঘাটস্থ ইবনে সিনা হাসপাতালের কেবিনে ৪-৫ জন রোগী দেখেছিলেন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও কয়েকজন রোগী দেখেছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে একজন রোগী দেখেছেন। ওসমানীর আইসিইউতেই সেই রোগী মারা যান। সন্দেহ ছিল- এই রোগীর মাধ্যমে মঈন আক্রান্ত হতে পারেন। তাই এই রোগী মারা যাওয়ার আগে তার নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু তার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।
ওসমানীর উপ-পরিচালক আরও বলেন, ওই চিকিৎসকের সংস্পর্শে আশা সবারই খোঁজ-খবর নেয়া হয়েছে। তার পরিবারের সদস্য, সহকারী, তার কাছে চিকিৎসা নেয়া রোগী, তার ফার্মাসিস্ট সবার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে কেউই করোনা পজিটিভ নন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সব রোগীর শরীরে উপসর্গ দেখা দেয় না। অনেকেরই করোনার উপসর্গ আসে না কিন্তু তিনি ভাইরাস বহন করতে পারেন। তখন ওই ব্যক্তি যদি হাঁচি-কাশি দেন এর মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে এ রকম কোনো রোগী বা রোগীর স্বজনের সংষ্পর্শে তিনি গিয়েছিলেন কি না তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক