বিশ্বজুড়ে মহামারি রুপ নেয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের এখনও কোনো প্রতিষেধক অবিস্কার হয়নি। ফলে করোনায় পজিটিভ হলে তাকে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা হয়। কিন্তু রয় হ্যান ও এমা হ্যান নামে এক দম্পতির ১৩টি সন্তান। এই করোনা মহামারিতে বিশাল এই পরিবার সামলাতে বড় দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তারা। এর মধ্যে হাসপাতালে কাজ করতে করতে রয় হ্যানের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বিবিসি জানায়, স্কটল্যান্ডের ডাণ্ডি শহরের বাসিন্দা এই হ্যান পরিবার, যারা স্কটল্যান্ডের বৃহত্তম পরিবারগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত। এই দম্পতির ১৩ সন্তানের ১০ জনই তাদের সাথে থাকে।
যুক্তরাজ্যে প্রথমবার লকডাউন ঘোষণা সঙ্গে সঙ্গে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রয় হ্যান এবং এমা হ্যান তাদের সন্তানদের জন্য রুটিন তৈরি করে এবং পারিবারিকভাবে সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরণের কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন।
অভিভাবকরা অনেক চেষ্টা করে প্রথম কিছুদিন তাদের সন্তানদের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার রয় যখন জানতে পারেন যে তিনি করোনাভাইরাস পজিটিভ, পরিবারটির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
নাইনওয়েলস হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজ করা রয় বলেন, 'কয়েকদিন আগে আমি সংক্রমিত হয়েছি আর উপসর্গ অত্যন্ত মৃদু। হাসপাতালে আমরা অনেক কভিড-১৯ রোগীর মধ্যে থাকি। কাজের বাইরে থেকে আমার বেশ দুঃখ হচ্ছে।'
হ্যানদের পুরো পরিবার এখন ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে - শুধু রয়ের ৭ দিন আইসোলেশনে থাকার কথা রয়েছে।
৫০ বছর বয়সী রয়ের টাইপ-২ ডায়বেটিস রয়েছে। তিনি জানান যে তিনি বেশ ভালই আছেন এবং পুরোপুরি সুস্থ হয়ে কাজে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন।
তিনি বলেন, 'আমি যেহেতু আমার সন্তানদের সঙ্গে বেশি বেশি থাকতে পারছি, তাই আমার দিন ভালই কাটছে। আমাদের বাসায় একসঙ্গে এত মানুষ রয়েছে, আমরা নিজেরা এত চাঙা থাকি যে যাতে আমাদের হার্ড ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়।'
এমা বলেন, 'যেহেতু আমরা একটি বড় পরিবার, আমাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়গুলো পালন করা বেশ কঠিন। একবার দোকানে গিয়ে আমরা একটি পণ্য বেশি পরিমাণে কিনতে পারি না, তাই আমাদের বারবার যেতে হয়। আর তার ফলে আমরা অন্যদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে থাকি।'
এমা জানান, তিনি পরিবারের সদস্যদের শুরুতে যখন রয়ের অসুস্থতা সম্পর্কে জানান, প্রথমদিন তারা এত চমকে গিয়েছিল যে অনেকক্ষণ কোনো কথাই বলতে পারেনি। কিন্তু এক দুই দিনের মধ্যেই পরিবারের সদস্যরা ব্যাপারটির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
প্রায় প্রতিদিনই হ্যান পরিবারের ১২ জন সদস্য তাদের বাগানে বাস্কেটবল খেলেন। এমা মনে করেন, এই ছোট কিন্তু সহজ বিষয়টিই তাদের পুরো পরিবারকে এই পরিস্থিতিতে একতাবদ্ধ রাখতে সহায়তা করছে।
এমা জানান, তার ১৪ বছর বয়সী পুত্র প্রায় সারারাতই এক্স বক্সে ভিডিও গেইম খেলে। এক মেয়ে সকালে ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে বাড়ি থেকে কাজ শুরু করে। তাদের একেকজনের জন্য একেকসময় খাবার তৈর করতে হলেও তিনি এই অবস্থা উপভোগই করছেন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম