করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংকট মোকাবিলা করতে যত বেশি সম্ভব মানুষের করোনা টেস্ট বড় হাতিয়ার। এভাবে প্রকৃত চিত্র উঠে এলে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হয়ে পড়ে। জার্মানিতে সেই লক্ষ্যে ব্যাপকহারে করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মার্চ মাস থেকে সপ্তাহে কমপক্ষে একবার বিনামূল্যে করোনা টেস্ট করানোর সুযোগ পাচ্ছেন মানুষ। প্রাথমিক এই পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া না গেলে মানুষ সেই ফলাফল দেখিয়ে দোকানবাজার, রেস্তোরাঁয় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন। দেশজুড়ে এমন টেস্টের সুযোগ করে দিতে সরকার বেশ উদারতার পরিচয় দিয়ে অসংখ্য বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে করোনা পরীক্ষা করার অনুমোদন দিয়েছে এবং টেস্টের ব্যয় পুরোপুরি বহন করছে। সেই সুযোগে অনেকেই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে মোটা টাকা কামিয়ে নিচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
এমন মারাত্মক অভিযোগের ফলে সরকার নড়েচড়ে বসেছে। শনিবারই তদন্ত শুরু হয়েছে। নানা ধরনের অভিযোগ উঠে আসছে। যেমন কোলন শহরে একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে বাস্তবে ৭০ জনের করোনা পরীক্ষা হলেও এক হাজার পরীক্ষার জন্য সরকারি ভর্তুকি নেওয়া হয়েছে। সরকার জনপ্রতি ১৮ ইউরো দেওয়ার ফলে এভাবে বিশাল অংকের মুনাফা করছে একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া দ্রুত প্রশিক্ষণসহ একাধিক কারণে অনেক কেন্দ্রে ঠিকমতো পরীক্ষাও হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। সেক্ষেত্রে সংক্রমণের শিকার হলেও কোনো ব্যক্তি নেগেটিভ করোনা পরীক্ষা হাতে পেতে পারেন, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এমন প্রেক্ষাপটে করোনা টেস্ট সেন্টারগুলোর ওপর আরও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের জন্য চাপ বাড়ছে। বিচার মন্ত্রণালয়ের মতে, হিসাবপত্রের ওপর নজর রেখে সম্ভাব্য দুর্নীতি চিহ্নিত করতে হবে। বাণিজ্যিক প্রতারণার জন্য দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে বলে মনে করিয়ে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পানের মতে, বেশিরভাগ করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র নিয়ম মেনে কাজ করছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
বিষয়টিকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সরকারের উপর চাপ বেড়েই চলেছে। ফলে সোমবার ফেডারেল ও ১৬টি রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা সে বিষয়ে আলোচনা করছেন। করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো এবং টেস্টের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রতারণা করতে গিয়ে ধরা পড়লে কড়া শাস্তির হুমকি দিচ্ছে সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও কর দফতরকেও নজরদারির কাজে ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
সার্বিকভাবে জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের হার কমে চলেছে। ফলে অনেক জায়গায় করোনা টেস্ট ছাড়াই দোকানবাজার ইত্যাদি স্থাপনায় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন মানুষ। অন্যদিকে করোনা টিকার দুটি ডোজ পাওয়া মানুষের সংখ্যাও ধীরে হলেও বাড়ছে। ফলে তাদের ক্ষেত্রেও করোনা টেস্টের প্রয়োজন হচ্ছে না। পরিস্থিতির আরও উন্নতি হলে করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর প্রয়োজন আপাতত কমে যাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ
.jpg)
