১৫ জুন, ২০২১ ১৫:৫৩

করোনাভাইরাস: চট্টগ্রামে ভারত, দ. আফ্রিকা ও ব্রিটেন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

করোনাভাইরাস: চট্টগ্রামে ভারত, দ. আফ্রিকা ও ব্রিটেন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ

চট্টগ্রামে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রিটেনের করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আগত রোগী এবং চট্টগ্রাম বিভাগের সাতটি করোনা ল্যাব ও হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করা নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স গবেষণা করে এ তিন দেশের ভ্যারিয়েন্টের রোগী শনাক্ত করা হয়।     

জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) যৌথভাবে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। চবি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল-ফোরকানের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের গবেষক দল চট্টগ্রাম বিভাগের সাতটি করোনা ল্যাব ও হাসপাতাল থেকে ৮২টি নমুনা সংগ্রহ করে ৪২টির জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণা করেন। 

নমুনাগুলোর মধ্যে চারটি দেশের ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। এর মধ্যে দুটি নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়, ৪২টি নমুনার মধ্যে ৩৩টি (৭৮.৫%) দক্ষিণ আফ্রিকার (বিটা ), ২টি (৪.৮%) ভারতীয় (ডেল্টা), ৩টি (৭.২%) নাইজেরিয়ার (ইটা) এবং ৪টি (৯৫%) যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট (আলফা)। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.৬১৭। বাংলাদেশে গত ৮ মে প্রথম ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়।          

গবেষক দলের সদস্য অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদা আঁখি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিভাগের সাতটি ল্যাব থেকে ৮২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৪২টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে দুটি নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। এটি উদ্বেগের। যে দুইজনের নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে, তারা ভারতে না গিয়েই আক্রান্ত হন এবং তারা ভারতফেরত কারও সংস্পর্শেও যাননি। ধারণা করছি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তাই এখন থেকেই সচেতন হতে হবে।’

অন্যদিকে, জেনারেল হাসপাতালে গত এপ্রিল-মে মাসে চিকিৎসা নিতে আসা ২৪ জন করোনা রোগীর নমুনা থেকে পাওয়া ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণা করেন একদল গবেষক। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন জেনারেল  হাসপাতালের কনসালটেন্ড ডা. এইচএম হামিদুল্লাহ মেহেদী। ঢাকার চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি পরিচালনা করে জেনারেল হাসপাতাল এবং চবি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ।  

গবেষণায় দেখা যায়, আইসিইউতে ভর্তি জটিল রোগীদের ৮০ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া করোনাভাইরাসের ধরনটিতে আক্রান্ত। এটিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে ‘বেটা ভ্যারিয়েন্ট’। মৃদু ও মধ্যম মাত্রায় অসুস্থ রোগীদের ৭৫ শতাংশও বেটা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ছিলেন। বাকি ২৫ শতাংশ রোগী ব্রিটেনে পাওয়া আলফা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। যে সব রোগীর ‘হাই ফ্লো অক্সিজেন’ প্রয়োজন হয়েছিল তাদের সবাই ছিলেন বেটা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। আর

আলফা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের অর্ধেকের উপসর্গ ছিল স্বল্পমাত্রার। বেটা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের ৯০ শতাংশের জ্বর, কফ ও সর্দির উপসর্গ ছিল।

জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. এইচএম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে জেনারেল হাসপাতালে  চিকিৎসা নিতে আসা ২৪ জন কোভিড রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা হয় এবং তাদের বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণ করা হয়।  

তাদের মধ্যে ছিলেন আইসিইউতে ভর্তি থাকা ১০ জন রোগী এবং মৃদু বা মধ্যম মাত্রায় অসুস্থ ১৪ জন, যারা আইসোলেশনে বা আউটডোর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে এটি গবেষণার প্রথম ধাপ। গবেষণাটি চলমান আছে।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

সর্বশেষ খবর