সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পানির অভাবে বিজয়নগরে বোরো আবাদ ব্যাহত

কৃষকের হাহাকার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার অন্তত ৭ হাজার ৫০০ একর জমি পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে চলতি বোরো মৌসুমে সাড়ে চার লাখ মণ ধান উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হাহাকার। তারা মনুষ্য সৃষ্ট এ সংকট পরিত্রাণে এখানে-সেখানে ঘুরছেন। কৃষি কর্মকর্তারা বলেছেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। জানা যায়, বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের সেমড়া কাঁদর খালে মাছ ধরার জন্য বাঁধ দেওয়া হয়। ফলে চাহিদামতো পানি না পাওয়ায় এলাকার ফসলি জমি চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। সূত্র জানায়, প্রতি একর জমিতে অন্তত ৬০ মণ ধান হওয়ার কথা। কিন্তু কাঁদর খালটি লিজ দেওয়ায় বিপুল পরিমাণ জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পানির অভাবে অন্তত সাড়ে চার লাখ মণ ধান কম উৎপাদন হবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে বিজয়নগরের ইউএনও আকতার উন নেছা শিউলীর কাছে ভুক্তভোগীরা লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদন বলা হয়, উপজেলার সেমড়া, তালতলা, ফতেহপুর, বুল্লা, মেরাসানী, গাছতলা, গোপালপুর, মিঠাপুকুর, এখতারপুর, পাইকপাড়া, মেঘশিমুল, বড়চাল, হাজীপুর, হাতুড়াপাড়া এবং বুধন্তি ইউনিয়নের আংশিকসহ আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা কৃষি ফসলের উপর নির্ভরশীল। এসব গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে গেছে কাঁদর খাল। এ খালের পানিতে গ্রামের ৭ হাজার ৫০০ একর জমিতে বোরো চাষ হয়। খালটি বহিরাগতদের ইজারা দেওয়ায় তারা মাছ ধরার জন্য ইচ্ছামত স্লুইস গেট খোলা এবং বন্ধ রাখে। এছাড়া ইজারাদাররা সেচে খালটি ইতোমধ্যে পানিশূন্য করে ফেলেছেন। পাশ্ববর্তী জমি পানির অভাবে খাঁ খাঁ করছে। কোনো কোনো জমি ফেটে চৌচির হয়েছে। লিজ গ্রহণকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কৃষকরা ভয়ে প্রতিবাদ করেন না। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আফজাল জানান, ইজারাদারদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে চলতি মৌসুমে ৭০ কানি জমিতে বোরো চাষ করতে পারিনি। একই অভিযোগ করেন স্কুলশিক্ষক ও জমির মালিক নোয়াব। আব্বাস, বাহার, মাহফুজসহ কয়েক কৃষক দ্রুত এ খালের পানি সরবরাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। বুধন্তি ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা জিতু মিয়া জানান, লিজের মাত্র ৫৫ হাজার টাকার জন্য সব জমি শেষ। উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সেক্রেটারি লিজগ্রহীতা হীরা লাল বলেন, ‘আমরা এক বছরের জন্য ইউএনওর কাছ থেকে খাল লিজ নিয়েছি। আইনগতভাবে খালের পানি সেচ দিয়ে মাছ ধরেছি।’ ইউএনও আকতার উন নেছা শিউলী বলেন, ‘মাছ চাষের জন্য লিজ দিয়েছি। খালের পানি সেচ দিতে বলিনি। বিষয়টি তদন্তে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি।’ কৃষি কর্মকর্তা মশকর আলী জানান, জমি পরিদর্শন করেছি। আরও তদন্ত হবে। বীজতলায় সেচের প্রয়োজন। সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে বোরো চাষ সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর