উত্তরের সীমান্ত জেলা লালমনিরহাট। আর্থ-সামাজিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই জেলার মানুষ দেশের অন্য জেলাগুলোর চেয়ে পিছিয়ে। এখানকার ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় লালমনিরহাট সরকারি কলেজ একমাত্র ভরসা হলেও নানা সমস্যায় দিন দিন শিক্ষার মান হারাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৮৪ সালে জাতীয়করণের পর থেকে নানা জটিলতায় খুঁড়িয়ে চলছে কলেজের কর্যক্রম। উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষক স্বল্পতা, অবকাঠামো ও পরিবহন সংকট। বর্তমানে কলেজেটিতে বিভিন্ন পদে ৫৪ শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৩১ জন।
জানা যায়, লালমনিরহাট সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি (পাস), ১০টি বিষয়ে অনার্স ও চারটি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু আছে। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। নিয়মানুযায়ী অনার্সে প্রতিটি বিভাগে সাতজন এবং মাস্টার্সে ১২ জন করে শিক্ষকের পদ থাকার কথা। বাস্তবে অধিকাংশ বিভাগে দুজন, দু-একটিতে সর্বোচ্চ পাঁচজন শিক্ষকের পদ রয়েছে। সহযোগী অধ্যাপকের পদ মাত্র তিনটি। অধ্যাপকের কোনো পদ নাই। তাছাড়া প্রাণিবিদ্যা ও অর্থনীতি বিভাগে এখন কোনো শিক্ষক কর্মরত নেই। এই স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক নিয়ে কলেজ প্রশাসন পাঠদানের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান বলেন, ‘শিক্ষক সংকটের কারণে আমাদের অধিকাংশ ক্লাস ঠিকমত হয় না। হোস্টেল ও পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় ভেঙে পড়েছে কলেজের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা। অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহ. সুজন শাহ-ই-ফজলুল সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘৩৫তম বিসিএস-এ নিয়োগের আগে শিক্ষকের চাহিদা জানিয়ে মাউশি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ওই বিসিএস থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মাত্র একজন শিক্ষক। অন্যান্য সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, দূরবর্তী এলাকার ছাত্র-ছাত্রীর জন্য পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় দরিদ্র শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে পারেন না। কলেজ হোস্টেল ও পরিবহন সংকটের কারণে জেলা শহরের বাইরের ছেলে-মেয়েরা উচ্চ শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, জেলার একমাত্র উচ্চ শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি সমস্যায় জর্জরিত হওয়ায় উচ্চশিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে। শিক্ষক মিজানুর রহমান পলাশ ও মৃনাল চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও অধিকাংশ সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধুঁকছে নানা সমস্যায়। সবার আগে উচ্চ শিক্ষার বাহক এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা দূরীকরণের আহ্বান জানান এই দুই শিক্ষক।