রবিবার, ৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

আমবাগানে নেই বেচা-কেনা ব্যবসায়ীরা হতাশ

আম বাজারজাত না করতে পারার শঙ্কায় পরিচর্যাও বন্ধ রেখেছেন অনেক চাষি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

আমের রাজধানী হিসাবে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা পরিস্থিতিতে এবার আম নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। আমবাগানগুলোতে এখন মাঝারি সাইজের আমের গুটিতে ভরপুর। ফলন নিয়ে হতাশার পাশাপাশি করোনার প্রভাবে বাজারের পরিস্থিতি ভালো থাকবে কিনা তা নিয়েই হতাশা রয়েছে। এতে চলতি মৌসুমে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় আমবাগানের পরিমাণ ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর। গত বছর ছিল ৩১ হাজার ৮২০ হেক্টর এবং গাছের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ ৩৯ হাজার ৬৩০টি। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগানগুলোতে নানা জাতের আমের গুটি অনেকটাই বড় হয়ে গেছে। জৈষ্ঠ্য মাসে বাজারে উঠতে শুরু করবে আম। জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল হওয়ায় এই আমকে ঘিরেই এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু  করোনার কারণে এ অঞ্চলের মানুষের মুখে হাসি যেন মলিন হয়ে গেছে। জেলা শহরের আম ব্যবসায়ী সুকুমার প্রমাণিক জানান, চলতি বছর গাছে গাছে আম পর্যাপ্ত হলেও আমের বাজার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বাগান মালিকরা। আম মৌসুম জুড়ে লেনদেন হয় কয়েক হাজার কোটি টাকার। এতে চাঙা হয় জেলার অর্থনীতি। মৌসুমের শুরু থেকেই বাগানের আম বিক্রি হয় এবং কয়েকবার হাত বদলও হয়। কিন্তু এবার করোনার প্রভাবে সবকিছুই গরমিল। আম বাজারজাত না করতে পারার আশঙ্কায় খরচ করে পরিচর্যাও বন্ধ রেখেছেন অনেক চাষি। এছাড়া আমবাগান মালিক হারুন অর রশীদ জানান, এ বছর আশানুরূপ আমগাছে গুটি এসেছে, বৃষ্টি হওয়ায় আমের জন্য ভাল হয়েছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমের ফলন ভালোই হবে আর এখন পর্যন্ত পোকার আক্রমণ না থাকায় আমগাছগুলোতে বাড়তি স্প্রে করা লাগছে না। কিন্তু করোনা ভাইরাসের জন্য আমের বাজার নিয়ে আম ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম হতাশা নেমে এসেছে। এদিকে কানসাট আম আড়তদার সমিতির সভাপতি কাজী এমদাদ বলেন, আম বাজারজাত করণে এবার প্রস্তুতি ভালোই ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এখানকার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।  মৌসুমের এই সময়টাতে কানসাট আমবাজার ও আড়তগুলোতে আমবাগান কেনা-বেচাকে ঘিরে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা গেলেও, এবার নেই কোন কর্ম-ব্যস্ততা। তাই আমের বাজারজাতকরণে আগাম পরিকল্পনা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আড়তদাররা। এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম জানান, সবকিছু মিলিয়েই এবার আমের ভালো ফলনের আশা করা যাচ্ছে। আম ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের আশ^স্ত করা হয়েছে, আম যাতে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বিঘেœ বাজারজাত করতে পারে। তিনি আরো বলেন, এ বছর প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করা হয়েছে। এদিকে, আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জমির উদ্দীন আহম্মদ জানান, আম উৎপাদনে আমচাষিরা যাতে কোনো সমস্যায় না পড়েন, সেদিক বিবেচনা করে বাগান ঘুরে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর