মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বাগেরহাটে স্লুইসগেট মরণফাঁদ পানিবন্দী ৬০ হাজার মানুষ

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটে স্লুইসগেট মরণফাঁদ পানিবন্দী ৬০ হাজার মানুষ

সুপার সাইক্লোন সিডর ও আইলাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত জনপদ বাগেরহাটের শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইসগেট এখন এলাকাবাসীর মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে গতকাল সর্বশেষ হিসেবে উপজেলার ৬০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফসলের খেত, মাঠ, পুকুর, রাস্তা-ঘাট, এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত স্লুইসগেটের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের (সিআইপি) আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারে বাঁধ পুনর্নির্মাণের কাজ করছে চায়নার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নির্মিত বাঁধে পর্যাপ্ত স্লুইসগেট রাখা হয়নি। এমনকি যেসব স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছে তা অপরিকল্পিত ও আগের চেয়ে সরু। এ অবস্থায় বঙ্গোপসাগরে লগুচাপের প্রভাবে গত মঙ্গলবার থেকে টানা তিন দিনের প্রায় ৭০০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে শরণখোলা উপজেলার ৯০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। পানিবন্দী হয়ে পড়ে ৮৬ হাজার ৫০০ মানুষ। কিন্তু স্লুইসগেটগুলো দিয়ে পর্যাপ্ত পানি নামতে না পারায় এখনো মানুষ পানিবন্দী হয়ে রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। গত পাঁচ দিনেও পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় রান্নাবান্নাসহ মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। এ ছাড়া আমনের বীজতলা, রোপা আউশ এবং সবজিসহ অন্যান্য মৌসুমি ফসল শত ভাগই পানির নিচে তলিয়ে যায়। ভেসে গেছে কয়েক হাজার মাছের ঘের ও পুকুরের মাছ। সরকারি হিসাবে কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা বলে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো থেকে জানা গেছে। এ ছাড়া রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি ও অবকাঠামোগত ক্ষতির হিসাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এদিকে গত শনিবার দুপুরে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৌদ্ধ শরণখোলায় পরিদর্শনে এলে তার কাছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানিবন্দী শত শত মানুষ দ্রুত পানি নিষ্কাশন ও পর্যাপ্ত স্লুইসগেট নির্মাণের দাবি জানান। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলী বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে আশ্বাস দেন। একই দিন রাত ৮টায় ইউএনও কার্যালয়ে সংকট নিরসনে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। শরণখোলার ইউএনও খাতুনে জান্নাত বলেন, অতিবৃষ্টিতে বর্তমানে শরণখোলায় প্রায় হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দী হয়ে রয়েছে। এ অবস্থা থেকে স্থায়ী সমাধানের জন্য জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে একটি সুপারিশ তৈরি করা হয়েছে। সুপারিশগুলো জেলা পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত হবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে একনেকের সভায় উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে একটি সুপারিশ প্রেরণ করা হবে। শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন বলেন, নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধের স্লুইসগেটগুলো আগের তুলনায় অনেক ছোট এবং অপর্যাপ্ত।

সর্বশেষ খবর