শিরোনাম
শনিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

একবেলার ফ্রি আহার ‘মেহমান খানা’

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

একবেলার ফ্রি আহার ‘মেহমান খানা’

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় বাজারের পাশে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে ‘মেহমান খানার’ আয়োজন করা হয়। নিরন্ন মানুষের জন্য বিনামূল্যে একবেলা উন্নত মানের খাবার খাওয়ানো হয় এখানে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ৮ ইউনিয়নসহ পার্শ¦বর্তী রানীশংকৈল ও সদর উপজেলা থেকে ভিক্ষুক, মানসিক ভারসাম্যহীন, নিম্ন আয়ের মানুষ এখানে একবেলা মাংস ও মাছ দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। এ কর্মযজ্ঞের শুরুতে কম মানুষ আসলেও দিন দিন মেহমানদের ভিড় বাড়ছে। প্রথমে ৩০/৪০ জন হলেও এখন প্রতি শুক্রবার এখানে ১৫০/২০০ মানুষকে পেট ভরে ফ্রিতে খাওয়ানো হয়। স্থানীয় এক সাংবাদিক ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলার মাছ বাজার সংলগ্ন বিডিও স্যানিটেশন ফার্মের মাঠে এ মেহমান খানার আয়োজন করেন। গত শুক্রবার ষষ্ঠ সপ্তাহে ২৫০ নিরন্ন মানুষ এখানে খেয়েছেন বিনামূল্যে। এবার সপ্তম সপ্তাহে প্রায় ৩০০ মানুষ খেতে এসেছেন মেহমান খানায়। গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন  স্বেচ্ছাসেবক সকাল থেকে চেয়ার ও টেবিল সাজাচ্ছেন। বাবুর্চি রান্না করছেন। বেলা গড়িয়ে জুমার আজান পড়লেই মেহমান খানায় শুরু হয় ভিক্ষুক ও নিম্ন আয়ের মানুষের উপস্থিতি। নামাজ শেষে কয়েক দফায় চলে খাওয়া-দাওয়া। মেহমান খানার স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, এক দফায় ১০০ জন মানুষ বসে খেতে পারবেন। তিন দফায় ৩০০ জন। তবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৭৫ জন মেহমান পেয়েছেন তারা। আশা করছে আগামী কয়েক সপ্তাহ গেলে ৫ শতাধিক মেহমান পাওয়া যাবে। জিয়াখোর গ্রামের মনসুর আলী ও ফুলতলা গ্রামের আক্তারুল ইসলাম নামে দুই বাবুর্চি সকাল থেকে ব্যস্ত সময় পার করছেন রান্নার কাজে।

জানতে চাইলে তারা জানান, মেহমান খানা চালুর পর থেকে কোনো পারিশ্রমিক না নিয়ে রান্না করে দিচ্ছেন তারা। ৮ বছরের বাবুর্চি পেশায় রান্না করে যতটা তৃপ্তি পেয়েছেন। গত ৬ সপ্তাহে তার চেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছেন তারা। আগামী সপ্তাহগুলো থেকে শুক্রবার কোনো অনুষ্ঠানের রান্নার দায়িত্ব  নেবেন না বলেও জানান তারা। আয়োজক সাংবাদিক হারুন জানান, দুই মাস আগের কথা। শুক্রবার দুপুরে এক ভিক্ষুক এসে আমার নিকট খাবার চেয়ে বসে। জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, পাঁচজনের বাড়িতে খাবার চাওয়ার পরও তাকে কেউ খাবার দিতে রাজি হয়নি। সেদিন মনস্থির করেছিলাম সপ্তাহে অন্তত একবার এমন নিরন্ন মানুষের জন্য একবেলা খাবার আয়োজন করার। স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজে নেমে পড়ি। তিনি জানান, ফেসবুকে হতভাগা সেন্টার নাম দিয়ে নিরন্ন মানুষের খাবারের আয়োজন করার ঘোষণা দেই। আর প্রথম শুক্রবার বাজারে আসা ভিক্ষুক, মানসিক ভারসাম্যহীন ও নিম্ন আয়ের মানুষকে একবেলা খাওয়ার জন্য দাওয়াত দিই। প্রথম সপ্তাহে ১১৫ জন এসেছিল। এরপর এটির নাম পরিবর্তন করে ‘মেহমান খানা’ রাখা হয়। কতদিন কার্যক্রম চলবে? এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশিদ জানান, আমার ইচ্ছা এটি চলমান থাকবে সারা জীবন। আমি ব্যক্তিগত ব্যয়ে ৬ সপ্তাহ পরিচালনা সম্পন্ন করেছি। ইতিমধ্যে অনেকেই সহযোগিতা করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন ও অনেকে সহযোগিতা করছেন। আশা করছি সমাজের বৃত্তবান লোকজন এগিয়ে আসলে এটি আরও বৃহৎ আকারে করা সম্ভব হবে। গতকাল স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম মেহমান খানায় কার্যক্রম দেখতে এসে জানান, পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ভিক্ষুক চলে এলে আমরা প্রচুর বিরক্তির সহিত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করি। কেউ হয়তো উচ্ছিষ্ট কিংবা সামান্য খাবার দিয়ে থাকি। কিন্তু এখানে ওইসব মানুষের অতিথির মর্যাদায় আপ্যায়ন করা হচ্ছে। নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ ও প্রশংসার দাবিদার। বালিয়াডাঙ্গীর বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহে ২০০ মানুষকে বিনামূল্যে খাওয়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে বিরাট সাহসের প্রয়োজন, প্রচুর টাকা খরচ আছে এটিতে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ। কার্যক্রমটি চলমান রাখার জন্য সমাজের বৃত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর