রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

১৩০০ বিঘা চিংড়ি ঘের দখলে উত্তেজনা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

১৩০০ বিঘা চিংড়ি ঘের দখলে উত্তেজনা

সাতক্ষীরা দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালী আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পারুলিয়া মৌজায় অবস্থিত ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৩২০ বিঘার চিংড়ি ঘের দখল করে নিয়েছে ভূমিহীন নামধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ। লুট করা হয়েছে ঘেরের কয়েক কোটি টাকার মাছ। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজানা বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ ও স্মারকলিপি প্রদানসহ সংবাদ সম্মেলন করেছে।  প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেও নিজ মালিকানাধীন জমির চিংড়ি ঘেরের দখল বুঝে পায়নি মালিকরা।  ফিল্মি স্টাইলে ওই সম্পত্তি জবর দখলের বিষয়টি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে উঠে এসেছে। অবৈধভাবে চিংড়ি ঘের দখল করে ঘেরের বেড়িবাঁধে ছোট ছোট টঙ ঘর নির্মাণ করার ঘটনায় সাইফুল ও রবিউল ইসলাম নামে কথিত দুই ভূমিহীন নামধারী নেতাকে বহিষ্কার করেছে সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতি। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন গড়িমসি করার কারণে এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘের মালিকরা ঘটনাস্থলে গেলে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। দীর্ঘ এক মাস সম্পত্তি বুঝে না পেয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে জমির মালিকরা। নামধারী এসব দখলদার ভূমিহীনরা ওই সম্পত্তি খাস দাবি করলেও জেলা প্রশাসক বলছে এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন। বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষকে ডেকে সালিশির মাধ্যমে নিষ্পত্তির করা হবে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ন কবির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতার কথা জানালেও ভূমিহীন নামধারীদের অত্যাচারে এলাকায় পুলিশ ঢুকতে পারে না।

জমির মালিক আইডিয়াল পরিচালক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, কাজী গোলাম মোরশেদ ও আলহাজ মো. আনছার আলীসহ কয়েকজন জানান, খলিশাখালিতে  রেকর্ডীয় ও লিজকৃত ৩০টি খে  বিভক্ত বিস্তীর্ণ চিংড়ি ঘের ও জমি স্থানীয় কিছু ভূমিহীন নামধারী জেলা ও জেলার বাইরে কয়রা ও পাইকগাছাসহ বিভিন্ন এলাকা  থেকে আসা তিন শতাধিক সন্ত্রাসী অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর রাত্র ২ টার দিকে ঘের কর্মচারীদের মারধর করে জোরপূর্বক দখল করে নেয়। পরদিন সকালে তারা প্রায় ৪ কোটি টাকার মাছ লুট এবং ঘেরের বাসাবাড়ি ভাঙচুর করে আনুমানিক ৩৬ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়-ক্ষতি করে। তাৎক্ষণিকভাবে দেবহাটা থানায় মামলা করতে গেলে ওসি মামলা না নিয়ে তাদেরকে ফিরিয়ে দেন। পরে ১২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা জজ কোর্টে মামলা করলে আদালত মামলা গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ফলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আরও মারমুখি হয়ে উঠে ভূমিহীনরা। দখলদারদের অত্যাচারে জমির মালিক ও ঘেরের ইজারা গ্রহীতারা কোনো ভাবেই তাদের ঘেরে যেতে পারছে না। তাদের অভিযোগ নামধারী এসব ভূমিহীনদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব ঘরবাড়ি। সাতক্ষীরার গুটি কয়েক প্রভাবশালী ভূমিহীন নামধারী নেতা এবং তালার একটি এনজিওর ইন্ধনে এই জমি দখল করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।  সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সামাদ জানান, খালিশাখালিতে তেমন কোনো খাস জমি নাই। প্রায় সবই ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি। নেতৃত্ব দিয়ে অবৈধভাবে ব্যক্তিমালিকানাধীন ওই সব সম্পত্তি দখলের কারণে খলিশাখালীর সাইফুল ও রবিউল ইসলামকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।  এদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ন কবির জানান, দেবহাটার খলিশাখালীর পারুলিয়া মৌজায় কোনো খাস জমি নাই, সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি জবর দখলের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রুতই উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে প্রকৃত জমির মালিকদেরকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।

সর্বশেষ খবর