পানির দামে লিজ দেওয়া হচ্ছে পঞ্চগড় চিনিকলের জমি। খোলা দরপত্রের মাধ্যমে মাত্র ৬ হাজার টাকা একর মূল্যে লিজ দেওয়া হচ্ছে এসব জমি। স্থানীয়ভাবে জমির ১ বছর মেয়াদে লিজ মূল্যের তুলনায় চিনিকলের এসব জমির মূল্য কয়েকগুণ কম। তাই স্থানীয়দের মধ্যে বিস্ময় ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। চিনিকল সূত্রে জানা যায় ক্রমাগত লোকসানের কারণে দেশের ছয়টি চিনিকল বন্ধ করে দেয় সরকার। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে একই কারণে বন্ধ হয়ে যায় ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত পঞ্চগড় চিনিকলও। শ্রমিক কর্মচারীরা কিছুদিনের জন্য বেকার হয়ে পড়লেও ধীরে ধীরে তাদের দেশের অন্য চিনিকলগুলোতে দায়িত্ব দিয়ে কাজে ফিরিয়ে আনে সরকার। কিন্তু ৩১টি আখ ক্রয় কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। আবাদি জমিগুলোতে চাষাবাদ স্থবির হয়ে পড়ে। এর আগে এই জমিগুলোতে আখ চাষ করা হতো। সর্বশেষ ২০২০ সালে আখ কেটে মাড়াইয়ের জন্য ঠাকুরগাঁও চিনিকলে পাঠানো হয়। তারপর থেকেই এসব জমি পতিত ছিল। জানা গেছে পঞ্চগড় চিনিকলের মালিকানায় মোট ২২৩ একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে জেলায় ৩১টি আখ ক্রয় কেন্দ্রে ২০ একর, কারখানা ও কলোনি ৯৮ একর এবং আবাদ যোগ্য জমি রয়েছে ১০৫ একর। চিনিকল বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে আবাদ যোগ্য এবং ক্রয় কেন্দ্রের জমিগুলো পতিত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ৪/৫টি ক্রয় কেন্দ্রের জমি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মামলা চলছে। পতিত থাকার কারণে এসব জমি বন্ধক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পঞ্চগড় সুগার মিল লি. কর্তৃপক্ষ। গত অক্টোবর মাসে তিন মাসের জন্য আবাদি ৩৫ একর জমি লিজ দেওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে প্রতিবিঘা জমি এক বছরের জন্য ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা দরে বন্ধক দেওয়া হয়। ১ বছরে প্রতি একর জমির বন্ধকি মূল্য ১৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু চিনিকলের জমি প্রতি একর মাত্র ৬ হাজার ২০০ টাকায় বন্ধক দেওয়া হয়। এ মাসেই এই লিজ সময় শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। চলতি ডিসেম্বরে আবার আবাদি ১০৫ একর ও আখ ক্রয়কেন্দ্রের ২০ একর জমি কয়েক বছরের জন্য বন্ধক দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। তবে চাষাবাদযোগ্য জমিতে বাধ্যতামূলকভাবে আখ চাষ করার শর্ত জুড়ে দিয়েছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কম মূল্যে এসব জমি লিজ নিয়ে বেশি মূল্যে তৃতীয়পক্ষের কাছে লিজ দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। পঞ্চগড় নাগরিক কমিটির সভাপতি এরশাদ হোসেন সরকার জানান, চিনিকলের সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। জনগণের সম্পদ। এত কম মূল্যে বন্ধক দেওয়া ঠিক নয়। এই সম্পত্তিগুলো ঘিরে সরকারের অন্য কোনো উদ্যোগের পরিকল্পনা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে কম মূল্যে লিজ দেওয়ার পেছনে কোনো দুর্নীতি আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার। পঞ্চগড় সুগার মিল লি.-এর প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. ইউসুফ আলী জানান পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জমি লিজ দেওয়া হয়।
যারা বন্ধক নেয় তারা এর চেয়ে বেশি মূল্য দিতে চায় না। কমমূল্যে জমি লিজের আবেদন পাওয়ার কারণে আমরা বার বার রি-টেন্ডার দিয়েছি। এবারও জমির মূল্য কম আসার কারণে আবার রিটেন্ডার হবে।