মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকা যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকা যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৈরি পাদুকা জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। ৩ শতাধিক কারখানায় ৮ হাজার পাদুকা শিল্পী কাজ করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদার কারণেই প্রতিবছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়ছে পাদুকার কারখানা। এতে একদিকে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে কমছে বেকারত্ব। পাদুকা কারখানার মালিক ও পাদুকার কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাদুকা শিল্পের গোড়াপত্তন হয়। ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় এখানকার লোকজন এই শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে প্রতিবছরই বাড়তে থাকে নতুন নতুন কারখানা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বর্তমানে জিপসি, লালা, রক্সি, সিটি, ইসপি, রানা, আরমান, কলেজ, শাপলা, শামীম, হাসান, মুরাদ, দিনা, শু-সহ প্রায় ৩ শতাধিক পাদুকা কারখানা আছে। এসব কারখানায় কাজ করছেন প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক। পৌর এলাকার পশ্চিম মেড্ডা পীরবাড়ি বাজার, সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বটতলী বাজার, ভাটপাড়া, রাজঘর, সুহিলপুর ইউনিয়নের সুহিলপুর ও তালশহর পূর্ব ইউনিয়নের অষ্টগ্রামে রয়েছে পাদুকা কারখানা। এ ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি পাদুকা কারখানা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি কারখানা রয়েছে মেড্ডা পীরবাড়ি বাজার ও আশপাশ এলাকায়। এসব পাদুকা কারখানায় চামড়া, রাবার, সোল, ফোম ও রেক্সিন দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা তৈরি করা হয়। আধুনিক, রুচিশীল, নতুন ডিজাইন, মানসম্মত ও টেকসই পাদুকা তৈরি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জুতার বাজার জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। লালা, রেক্সিন, জিপসি, সিটি, ইসপি, রানা, আরমানসহ নানা নামের জুতা এখন সব বয়সী মানুষের পছন্দ। পাদুকা কারখানার কয়েকজন মালিক বলেন, তাদের উৎপাদিত জুতা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটেও পাওয়া যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকা। পাদুকা কারখানার মালিকরা আক্ষেপ বলেন, পাদুকা তৈরির উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান এ ব্যবসায় তেমন লাভ নেই। তবে পাদুকার কারিগররা অভিযোগ করে বলেন, তারা দিন-রাত পরিশ্রম করে বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা তৈরি  করলেও পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। পীরবাড়ি বাজারের দিনা সুজের কারিগর লিটন মিয়া বলেন, আমাদের শ্রমের বিনিময়ে মালিকরা বাড়ি-গাড়ির মালিক হলেও আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আমরা প্রত্যাশিত মজুরি পাচ্ছি না। তিনি বলেন, আমরা কারিগররা সিজনে ১৮/২০ হাজার টাকা রোজগার করি। বেকার থাকব বলে কাজ করি।  লিটন মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জুতার ব্যবসা ভালো ছিল কিন্তু ভারতীয় ও চায়না জুতা বাজারে আসায় ব্যবসার কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। পীরবাড়ি বাজারের হাসান সুজের কারিগর মোবারক হোসেন বলেন, তিনি ৩০ বছর ধরে এই পেশায় আছেন। বর্তমানে রেটে কাজ করে তার পোষায় না। তার সঙ্গের অন্য কারিগররা অন্যান্য পেশায় চলে গেছে। মুরাদ সুজের কারিগর ফারুক মিয়া বলেন, ভারতীয় ও চায়না জুতা বাজারে আসায় আমাদের রোজগার কমেছে। জুতার কাজ করে এখন আর পোষায় না। বছরে দু-চার মাস ভালো টাকা পাওয়া গেলেও বছরের অন্যান্য মাসগুলোতে খেয়ে-বেঁচে সমান সমান। ভাবছি অন্য পেশায় চলে যাব। হাসান সুজের মালিক আবদুল আলীম বলেন, আমাদের ব্যবসা এখন আগের মতো নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর