রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

মহানন্দার বুকে চাষাবাদ

প্রস্তাবনা অনুমোদন পেলে শুরু হবে ড্রেজিং

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

মহানন্দার বুকে চাষাবাদ

ফসলের আবাদ নদীজুড়ে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চাঁপাইবাবগঞ্জে মহানন্দা নদীর বুকে হয়েছে ফসলের আবাদ। যেদিকে চোখ যায়, দেখা মিলবে পাকা-আধাপাকা ধান খেত। খরায় ধান খেতে পানি দেওয়ার জন্য বসানো হয়েছে সেচ পাম্প।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের খালঘাট থেকে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর সেতুসংলগ্ন তীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কম থাকায় মহানন্দা নদীর পাড়ে কৃষকরা বিভিন্ন ফসল চাষ করেছেন। এখানে উৎপাদিত ফসলের বাড়তি আয়ে কৃষকরা জীবনজীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। সূত্র জানায়, ভারতের গঙ্গার একমাত্র উপনদী হচ্ছে বাংলাদেশের মহানন্দা। নেপালের দক্ষিণ-পশ্চিমে হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে কার্সিয়াং ও শিলিগুড়ি অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ণিয়া ও মালদহ জেলার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটের কাছ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ সীমায় প্রবেশের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরকে বাঁয়ে রেখে গোদাগাড়ীর পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

বাংলাদেশে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৬ কি.মি.। মহানন্দা এক সময়ে প্রশস্ত এবং গভীর নদী ছিল। যার বুকে চলাচল করত বড় বড় মালবাহী নৌকা। বৃষ্টির পানি এ নদীর প্রবাহের প্রধান উৎস। ফলে গরম ও শীতকালে পানি কমে যায়। বর্ষা মৌসুমে নদীর দুই কূল ছাপিয়ে বন্যা হয়। খরা মৌসুমে নদী শুকিয়ে রূপ নেয় মরুভূমিতে। এ সময় নদীর বুকে ধান, গমসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা হয় সেচের মাধ্যমে। সব সময় নদীর পানি ধরে রেখে চাষাবাদসহ মাছ উৎপাদন বাড়াতে মহানন্দায় রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, যা ২০২৩ সালের ৩০ মে শেষ হওয়ার কথা। রাবার ড্যামে কাজ শেষ হলে আর নদীর বুকে চর জাগবে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ময়েজ উদ্দিন বলেন, পানি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রায় ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রাবার ড্যাম প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ড্যামের কাজ সম্পন্ন হলে মহানন্দায় সারা বছর পানি থাকবে। তখন বছরজুড়ে দেশি মাছ আহরণ ও কৃষি জমিতে সেচ দেওয়া যাবে।

খালঘাট এলাকার বাসিন্দা ইয়াসিন ফকির বলেন, এক সময় মহানন্দায় বড় বড় পালতোলা নৌকা ও লঞ্চ চলাচল করত। বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে আসতে বাণিজ্য করতে। তখন এলাকার নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছিল জমজমাট হাট-বাজার। কালের বিবর্তনে নদী ড্রেজিং না করায় ভরাট হয়ে গেছে। ফলে অনেকে নদীর বুকে চাষবাদ শুরু করে।

অপর বাসিন্দা কৃষক হরমুজ আলী বলেন, আমাদের ছেলেবেলায় এই নদীতে গোসল করেছি। এখন পায়ে হেঁটে এপাড় থেকে ওপাড় যেতে হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জসীমউদ্দিন বলেন, আমরা সরকারের কাছে নদীটি ড্রেজিং করার জন্য আবেদন করেছি।আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিগগিরই নদীর ড্রেজিং কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, মহানন্দা নদীর ড্রেজিং কাজ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই প্রস্তাবনা অনুমোদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তখন নদী ফিরে পাবে তার আপন গতি। এছাড়া স্থানীয় জনগণ ড্রেজিং হলে নদীর পানি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর