শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

দুর্ভোগ কমেনি উপকূলবাসীর

বসতবাড়িতে এখনো হাঁটুপানি, বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

দুর্ভোগ কমেনি উপকূলবাসীর

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পানিবন্দি ঘরবাড়ি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের দুর্গত মানুষের ভোগান্তি কমেনি। এখনো বসতবাড়ির উঠান, আঙিনায় ও হাঁটু থেকে কোমর পানি জমে আছে। বিধ্বস্ত পড়ে আছে রাস্তা-ঘাট। এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। টয়লেটগুলো ডুবে থাকায় ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকের কষ্টের ফসল। ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়াসহ পানিবাহিত রোগ। গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। গৃহপালিত পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। খাবার পানির সংগ্রহের জন্য মাইলের পর মাইল পথ যেতে হচ্ছে ইউনিয়নের প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষকে। বেশি সংকটে পড়েছে পশ্চিম পোড়াকাটলা, পূর্ব পোড়াকাটলা, পশ্চিম ও পূর্ব দুর্গাবাটি, আড়পাঙ্গাশিয়া, দাতিনাখালী ও কলবাড়ীসহ আশপাশের গ্রামের নিম্নাঞ্চলের মানুষ। পাঁচ দিন ধরে জিও ব্যাগ ও বাঁশ, খুঁটি পুঁতে কাজ করার পর অবশেষে গত বুধবার শ্যামনগর উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত করতে সক্ষম হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢোকা বন্ধ হলেও উপকূলবাসীর দুর্ভোগ কমেনি এখনো। পুড়াকাটলা গ্রামের নমিতা হালদার, সুনীতি রানী জানান, এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এক ফোঁটা সুপেয় পানির জন্য আমাদের হাঁসফাঁস করতে হয়। দুর্গাবাটি গ্রামের মাধবী মণ্ডল ও রবিন্দ্রনাথ মণ্ডল জানান, খাবার পানি সংকটের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে মহাবিপদে আছেন তারা। নিজেদের খাবারের জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে চাল, ডাল, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেলেও গোখাদ্যের সংকট থেকেই যাচ্ছে। টাকা দিয়েও গরু-ছাগলের জন্য ঘাস ও বিচালি পাওয়া যাচ্ছে না। পুড়াকাটলা গ্রামের রত্না রানী ও সঞ্জিত গাইন জানান, বাঁধ মেরামত হলেও ঘর-বাড়ির উঠানে এখনো লোনা পানি জমে আছে। প্রসাব-পায়খানার কাজ সারতে তাদের বসচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে। সুপেয় পানির পুকুর ও আধার নষ্ট হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে লোনা পানি ব্যবহার করায় শরীরে ঘা-পাঁচড়া বের হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমানের দেওয়া তথ্যমতে, দুর্গাবাটি উপকূল রক্ষাবাঁধ ভেঙে ১ হাজার ৭০০ চিংড়ি ঘের, পুকুর ও কাঁকড়া খামার প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে বিভিন্ন জাতের ৯৬ মেট্রিক টন মাছ ও ১১৬ লাখ চিংড়ি পোনা। এ অঞ্চলের ঘেরমালিক, চিংড়ি ব্যবসায়ী ও কাঁকড়ার খামারিদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, গত ১৪ জুলাই সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর তীব্র স্রোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দুর্গাবাটি উপকূল রক্ষাবাঁধে ২০০ ফুট ধসে যায়। ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকে প্লাবিত হয় বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি, মাছের ঘের ও পুকুর।

 

সর্বশেষ খবর