সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বোয়ালমারীতে স্কুলের বারান্দায় স্বাস্থ্যসেবা

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

বোয়ালমারীতে স্কুলের বারান্দায় স্বাস্থ্যসেবা

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১৪ দিন ধরে তালা ঝুলছে। স্বাস্থ কেন্দ্র বন্ধ রাখার কারণে শিশুদের ইপিআই টিকাও দেওয়া হয়েছে পাশের স্কুলের বারান্দায়। এমনকি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) মো. নুরুল ইসলাম ১৪ দিন ভয়ে যান না ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। এ কারণে গত ৪ আগস্ট থেকে ওই এলাকার মানুষ সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবা থেকে বঞ্চিত বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। জানা যায়, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। তার পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে তিনটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। সাতৈর ইউনিয়নে ‘কাদিরদী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র’ নামে কাদিরদী বাজার সংলগ্ন স্বাস্থ কেন্দ্রে জরুরিভাবে এলাকাবাসীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে সরকারি ওষুধও সরবরাহ করা হয়। কাদিরদী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সঙ্গে রয়েছে কাদিরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘদিন এ দুই সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমির সীমানা নিয়ে বিরোধ চলছে। বিরোধের এক পর্যায়ে দুই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সময়ের অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি মাসের ৪ তারিখে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার সরেজমিন দুই প্রতিষ্ঠানের সীমানা জরিপ করেন। জরিপের একপর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে স্কুলের কিছু অংশ জমি পাওয়া যায়। ওই সময় সীমানা পিলার বসানোর একপর্যায়ে কাদিরদী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. নুরুল ইসলাম এবং কাদিরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুর রহমানসহ শিক্ষকদের মধ্যে বাগবিত া হয়। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৪ আগস্ট থেকে দুই প্রতিষ্ঠানের জমিজমার বিরোধের জেরে ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ক্লিনিকে না গিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখেন। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় শনিবার সাতৈর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভলান্টিআর (স্বাস্থ্যসেবা) মুরাদ মাহমুদকে বাচ্চাদের ইপিআই টিকা স্কুলের বারান্দায় দিতে দেখা যায়। এ কারণে এলাকাবাসী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

কাদিরদী গ্রামের বাসিন্দা নিশিকান্ত দাস বলেন, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এলাকার মানুষ ঠিকমতো সেবা পাচ্ছে না। এমনকি সরকারি ওষুধ দেওয়া বন্ধ রয়েছে এখানে। দ্রুত সেবা কেন্দ্র চালু করার দাবি জানান তিনি। গতকাল দুপুরে কাদিরদী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. নুরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আমরা জনগণকে সেবা দিতে এসেছি। কারও সঙ্গে মারামারি করার জন্য নয়; যেহেতু দুই প্রতিষ্ঠানই সরকারি। সেহেতু দুই প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এটি সমাধান হতে পারে। জমি মাপার পর স্কুল স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে কিছু অংশ জমি পেয়েছে। সীমানা পিলার বসানোর সময় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমার হাত ধরে মোচড় দেন। স্কুলের অন্য শিক্ষকরা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি-ধমকি দেন। সে জন্য আমি গত ৪ তারিখ থেকে ভয়ে অফিসে যাই না। বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জন স্যারকে জানিয়েছি। তারা যেদিন আমাকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে বলবেন সেদিনই আমি যাব। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে কিছু গাছ ছিল তাও প্রধান শিক্ষক কেটে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে কাদিরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান বলেন, স্কুলের জায়গা এতদিন ধরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ দখল করে রেখেছিল। সহকারী কমিশনারের সার্ভেয়ার জমিতে এসে মাপ দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কী কারণে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি বন্ধ করে রেখেছে তা আমি জানি না। তবে কাউকে আমরা হুমকি-ধমকি দেইনি। স্কুলের জায়গার গাছ কাটা হয়েছে। গতকাল বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালেদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জায়গা নিয়ে একটু বিরোধ রয়েছে। সহকারী মেডিকেল অফিসার নিরাপত্তা চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। স্কুলের শিক্ষকদের হুমকি-ধমকিতে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাচ্ছেন না বলে জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ গণ্যমান্যদের সঙ্গে বসে দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে পুনরায় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু করার ব্যবস্থা করা হবে।  বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজাউল করিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত আছি। দুটি প্রতিষ্ঠানের জায়গা মেপে সীমানা নির্ধারণ করেছে এসিল্যান্ড। দ্রুত সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বিষয়টি সমাধান করা হবে।

সর্বশেষ খবর