মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বীজের টাকা পাচ্ছেন না কৃষক

বাড়ছে দুশ্চিন্তা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে কৃষি কর্মকর্তারা

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

বীজের টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ কুমিল্লার ১৭ উপজেলার কৃষক। মাঠে গেলে ব্রিবতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। অনেক কৃষক টাকার জন্য তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সময়মতো টাকা পরিশোধ না করায় এই বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস, কৃষক ও স্থানীয়দের সূত্র জানায়, চলতি বছর আগস্ট মাসে জেলার ১৩৪ জন কৃষকের কাছ থেকে ৭৫ টনের বেশি ধান বীজ কেনে বিএডিসি। টাকা এক মাসের মধ্যে পরিশোধের কথা থাকলেও তা তিন মাসেও দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে হতাশ কৃষকরা। আদৌ এ টাকা পাবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। সূত্র জানায়, কৃষকদের থেকে বীজ সংগ্রহ করে বিএডিসিকে দিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা। টাকা না পেয়ে মাঠের উপ-সহকারী কর্মকর্তাসহ অন্যদের সঙ্গে কৃষকরা খারাপ আচরণ করছেন। অনেক কর্মকর্তা বীজ নেওয়া কৃষকের এলাকায় যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। কৃষক ও মাঠ কর্মকর্তার মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। এ দৃশ্য সারা দেশেই বলে জানা গেছে। এতে বিঘ্নিত হবে ফসল উৎপাদন-এমন শঙ্কাও রয়েছে। কোনো উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তারা নিজেদের পকেট থেকে কিছু টাকা দিয়ে কৃষকদের শান্ত করছেন। তার মধ্যে অন্যতম লাকসাম। বেশি বেকায়দায় আছেন চৌদ্দগ্রামের কর্মকর্তারা। সেখান থেকে বেশি বীজ সংগ্রহ হয়েছে। প্রতিদিন টাকার জন্য অফিসে আসছেন কৃষকরা। সদর দক্ষিণ উপজেলার ঘিলাতলী গ্রামের কৃষক আবু আহমেদ বলেন, তিনি ১২ মণ ধানের বীজ বিক্রি করেছেন। তিন মাসেও টাকা পাননি। ফলে নতুন ধান ও সরিষা আবাদ করতে পারছেন না। বীজ বাইরে বিক্রি করলে সময়মতো এবং আরও বেশি টাকা পাওয়া যেত। তিনি আর কখনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বীজ বিক্রি করবেন না বলে জানান। বরুড়া উপজেলার ভবানীপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার ভুইয়া, সদর দক্ষিণ উপজেলার কালিরবাজার ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহিদা খাতুন বলেন, কৃষক আমাদের মাধ্যমে বীজ দিয়েছেন। তারা টাকার জন্য বারবার বলছেন। এটা নিয়ে আমরা মাঠে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছি। লাকসাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ শাহিনুল ইসলাম, সদর দক্ষিণ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার চৌধুরী, বরুড়া উপজেলা কৃষি অফিসার নজরুল ইসলাম, চান্দিনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল হক রোমেল, বুড়িচংয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বানিন রায় ও চৌদ্দগ্রামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুব্রত রায় বলেন, বিষয়টি বিব্রতকর। এতে কৃষকের সঙ্গে মাঠ কর্মকর্তাদের আস্থার সংকট দেখা দেবে। বিষয়টি দ্রুত সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, বীজের টাকা সময়মতো না পেয়ে কৃষকরা ক্ষুব্ধ। বিষয়টি মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে। বিএডিসি (বীজ প্রক্রিয়াজাত অঞ্চল কেন্দ্র) কুমিল্লার যুগ্ম পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে টাকা ছাড় হতে দেরি হওয়ায় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। চেষ্টা করছি কৃষকের বীজের টাকা দ্রুত পরিশোধের।

সর্বশেষ খবর