রবিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

৩১ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

৩১ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ

অধিক লাভের আশায় লালমনিরহাটের চাষিরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। জেলায় চলতি বছর সাড়ে ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় দেড় লাখ কৃষক ভুট্টা চাষ করেছেন। এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। বর্তমানে ভুট্টাখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাঁচ উপজেলায় মোট ৩১ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে প্রায় দেড় লাখ কৃষক ভুট্টা চাষ করেছেন। এর মধ্যে পাটগ্রাম উপজেলায় ১২ হাজার ৭০০ হেক্টর, হাতীবান্ধা উপজেলায় ১৩ হাজার হেক্টর, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৩ হাজার ৬১৫ হেক্টর, আদিতমারী উপজেলায় ৪৬০ হেক্টর এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ১ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মহকুমা থেকে জেলায় পরিণত হয় লালমনিরহাট। মোট ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমির মধ্যে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১ লাখ ৩৮৪ হেক্টর। জেলায় ভুট্টা চাষ শুরু হয় ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে। মাত্র ৪০ একর জমি দিয়ে ভুট্টা চাষ শুরু হয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে পাটগ্রাম-হাতীবান্ধা অঞ্চলে ভুট্টা চাষ বাড়তে থাকে। বর্তমানে পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ভুট্টা চাষ। বর্তমানে জেলার ব্র্যান্ডিং নাম ‘ভুট্টায় ভরা সবার ঘর, লালমনিরহাট স্বনির্ভর’। পাটগ্রাম উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়নের ভুট্টাচাষি মজিবর রহমান বলেন, ‘আমি আড়াই একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি।

প্রতি একরে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১২০ মণ ভুট্টা উৎপাদনের আশা করছি। বর্তমানে প্রতি কেজি ভুট্টা ৩৪-৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

নতুন ভুট্টা প্রতি কেজি ২৮-২৯ টাকা দরে বেচাকেনা হলেও এক একর জমিতে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ টাকার ফসল বিক্রি হবে। এতে প্রতি একরে প্রায় ৭৪ হাজার টাকা লাভ হবে। দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় স্থানীয়রা ১০-১১ বছর ধরে ভুট্টা চাষ করছে।’ একই উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের উফারমারা এলাকার মোশাররফ হোসেন বুলবুল বলেন, ‘৯-১০ বছর আগে এলাকার বেশির ভাগ কৃষক শুধু তামাক চাষ করতেন। কিন্তু এখন একই জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। চাষিরাও আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এখন আমাদের এলাকার যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই ভুট্টাখেত দেখতে পাবেন। মানুষের ভাগ্যও বদলে গেছে। প্রতি বছর ভুট্টা ঘরে তোলার পর বিক্রি করে মানুষ পাকা ঘরবাড়ি তৈরি করছে।’ হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর সিঙ্গিমারী এলাকার আব্দুল হামিদ ও নেছার উদ্দিন বলেন, ‘আগে আমরা তামাক চাষ করতাম। এখন ভুট্টা চাষের প্রচলন হওয়ায় আমরা অনেক ভালো আছি।’ তারা আরও বলেন, ‘এক বিঘা (২৭ শতক) জমিতে ভুট্টা চাষে প্রায় ১৫ হাজার টাকা করে খরচ হয়। ভুট্টা বিক্রি করে ৩৩-৩৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। কৃষকের দ্বিগুণেরও বেশি লাভ হয়। এজন্য সবাই ভুট্টা চাষ করছেন।’ একই উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের পারুলিয়া এলাকার আব্দুর রশিদ বলেন, ‘কৃষি বিভাগের কাছে তিস্তার চরের সঠিক কোনো তথ্য নেই। তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরের জমিতে ভুট্টা চাষে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। কৃষক যেন সোনা উৎপাদনের খনি পেয়েছে। এ চরে আমারও দুই একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। প্রায় এক যুগ ধরে সেখানে ভুট্টা চাষ করছি। ভুট্টা আমাদের পরিবারের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। এ এলাকায় ভুট্টা নিয়ে সরকারের নজর দেওয়া প্রয়োজন।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা সরকারের তরফ থেকে চেষ্টা করছি ভুট্টা, গম, সরিষা ও বোরো ধান উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহী করতে। এজন্য বিভিন্ন প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাটগ্রাম-হাতীবান্ধা এ দুই উপজেলায় ভুট্টা চাষে নীরব বিল্পব ঘটে গেছে। এখন কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষকরাও সে পথে হাঁটছেন। আদিতমারী-লালমনিরহাট সদর উপজেলায়ও ভুট্টা চাষ বাড়ানোর জন্য স্থানীয় সচেতন মহলকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে একটা সময় এ অঞ্চলে ব্যাপক ভুট্টা চাষ হবে। ফলে বিদেশ থেকে ভুট্টা আমদানি কমে যাবে। ডলারের রিজার্ভ ভেঙে আমদানিও করতে হবে না।’ লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ‘তিস্তা চরে এবং জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ উপজেলায় এবার ব্যাপক ভুট্টা চাষ হয়েছে। এসব অঞ্চলের কৃষকের উৎপাদিত ভুট্টা দিয়ে কৃষিনির্ভর কলকারখানা গড়ে উঠতে পারে। এ বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

সর্বশেষ খবর