শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

উন্নয়নে বদলে গেছে নওগাঁ

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

উন্নয়নে বদলে গেছে নওগাঁ

উন্নয়নে বদলে গেছে নওগাঁ জেলা। বর্তমান সরকারের সময়ে বিগত কয়েক বছরে কেবলমাত্র স্থানীয় সরকার বিভাগ ১ হাজার ৩১০ কোটি ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয় করে ৩৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সড়ক নির্মাণ ও উন্নয়ন, হাট-বাজার উন্নয়ন, ব্রিজ-কার্লভার্ট নির্মাণ ও সংস্কার, মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ ইত্যাদি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহম্মেদ জানান, এসব প্রকল্পের মধ্যে ২১টি প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে এবং ১৬টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। চলমান কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। শতভাগ সম্পন্ন হওয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে ৮ কোটি ৮৫ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ে অধিকারভিত্তিক গ্রামীণ সড়ক ও হাট-বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। ২০০৯ সালে শুরু হয়ে প্রকল্পটি শেষে হয়েছে ২০১৪ সালে। ২০০৮ সালে শুরু হয়ে ২০১৬ সালে শেষ হয়েছে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (জনগুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ যোগাযোগ এবং হাট-বাজার উন্নয়ন ও পুনর্বাসন) প্রকল্প দ্বিতীয় খ । মোট প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ২৫ কোটি ৬৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। উপজেলা, ইউনিয়ন সড়ক, সেতু, কার্লভার্ট নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৩৮ কোটি ১২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ২০০৯ সালে প্রকল্পটি শুরু হয় এবং শেষ হয়েছে ২০১৬ সালে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অনগ্রসর উপজেলার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে মোট বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ১৫৮ কোটি ৫০ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। ২০০৯ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে শেষ হয়েছে ২০১৭ সালে। ২০১০ সালে শুরু হয়ে বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগ সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ২০১৪ সালে। এ প্রকল্পে মোট অর্থের বরাদ্দ ছিল ৬ কোটি ২৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। ২০১০ সালে হাতে নেওয়া হয় অগ্রাধিকার ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে ২০১৬ সালে। এসব প্রকল্পে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয় ১০২ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প হতে নেওয়া হয় ২০১০ সালে। এ প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়েছে ২০১৭ সালে। প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ৭৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা। দ্বিতীয় খে  ইউপি কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। এ প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ৯৯ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে ২০২০ সালে। ২০১০ সালে শুরু হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-নওগাঁ ভায়া বটতলী জিসি-গাবতলী জিসি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। এটি শেষ হয়েছে ২০১৩ সালে। প্রকল্পে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৫ কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। বৃহত্তর বগুড়া, রাজশাহী ও পাবনা জেলা উন্নয়ন প্রকল্পে নওগাঁ অংশে ইউনিয়ন সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৮ সালে। প্রকল্পে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৩ কোটি ৭ লাখ ২৭ হাজার টাকা। উপজেলা ও রিজিওনাল সার্ভার স্টেশন নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১০ সালে। প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হয় ২০১১ সালে। প্রকল্পে মোট সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। এলজিইডি ১৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে অংশগ্রহণমূলক ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ সেক্টর প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে এবং তা সম্পন্ন হয়েছে ২০১৭ সালে। এ বিভাগের মাধ্যমে ভূমিহীন অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৩ সালে এবং তা শতভাগ শেষ হয়েছে ২০১৭ সালে। প্রকল্পে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪ কোটি ২৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এ জেলায় উপজেলাগুলোর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয় ২০২১ সালে। প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৪ কোটি ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ২০১৮ সাল হাতে নেওয়া হয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণ কাজ। ১ কোটি ৪৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হয়েছে ২০২১ সালে।

 সাসটেইনেবল রুরাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ২০১৩ সালে। প্রকল্পটির শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে ২০১৭ সালে এবং এ প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ছিল ১১১ কোটি ৫ লাখ টাকা। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ছিল ৮ কোটি ৫৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এসব প্রকল্প ২০১২ সালে শুরু হয়ে শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে ২০১৬ সালে। অগ্রাধিকারভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২ শুরু হয় ২০১৫ সালে। প্রকল্পে মোট সরকারি বরাদ্দ ছিল ১২৬ কোটি ৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা। প্রকল্পগুলোর শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে ২০২১ সালে। জেলার পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলার গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প শুরু হয় ২০১৬ সালে। এটি শেষ হয়েছে ২০১৯ সালে। প্রকল্পের আওতায় সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয় ২২ কোটি ১৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা। জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। ২০২১ সালে সম্পন্ন হয় এ প্রকল্প। এসব কাজে মোট বরাদ্দ ছিল ১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। সরকার ২০১৭ সালে হাতে নেয় সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ। এসব উন্নয়ন কাজে মোট বরাদ্দ ছিল ১২ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। এসব প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে ২০২১ সালে। অপরদিকে এলজিইডি কর্তৃক গৃহিত মোট ১৬টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে বৃহত্তর রাজশাহী জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের কাজ। এসব কাজের জন্য সরকারি ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হজার টাকা। এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৫ সালে। কাজের অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ। অগ্রাধিকার ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩ এর কাজ শুরু হয়েছে ২০২১ সালে। এ প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৭৬ কোটি ২০ লাখ ১২ হাজার টাকা। কাজের অগ্রগতি ৪৪ শতাংশ। পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে। প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৪২ কোটি ৯৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৫১ ভাগ। দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জেলায় কাজ শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে। এসব কাজের জন্য সরকারি বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৭৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এসব কাজের অগ্রগতি ৪৬ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগ (সিরাজগঞ্জ জেলা) ব্যতিত) পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে। নওগঁাঁ অংশে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩৫৫ কোটি ৬৮ লাখ ৮ হাজার টাকা। কাজের অগ্রগতি ৪০ ভাগ। বন্যা ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে ২০১৮ সালে। প্রকল্পে মোট বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এ কাজের অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালে। প্রকল্পে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৩৬ কোটি ৮২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ৮৯ ভাগ। উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৯ সালে এবং এ প্রকল্পে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৫ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কাজের অগ্রগতি ২০ ভাগ। ঘূর্ণিঝড় আস্ফান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ২৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ২০ ভাগ। রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট শুরু হয়েছে ২০১৮ সালে। প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৮৩ কোটি ৬৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। ২০১৮ সালে শুরু হয়েছে প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেস। এক্ষেত্রে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৭ কোটি ৫২ লাখ ৪১ হাজার টাকা। কাজের অগ্রগতি ৩০ ভাগ। ২০১৮ সালে শুরু হয়েছে উপজেলা শহর (নন-মিউনিসিপ্যাল) মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন ও মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৫৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। টেকসই ক্ষুদ্রকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৭ সাল। এ কাজে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি টাকা। প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। সারা দেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। প্রকল্পে জেলায় মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৮০ লাখ ৯২ হাজার টাকা। বর্তমান অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন ভবন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১২ সালে। এ জেলায় সংশ্লিষ্ট কাজে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪৯ কোটি ৮১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। কাজের অগ্রগতি ৯৮ ভাগ। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে যা চলমান রয়েছে। প্রকল্পে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৪৯ কোটি ৩৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৯২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহম্মেদ আরও জানান, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতায় এসব কাজ সম্পন্ন হওয়ার ফলে জেলার শিক্ষা, যোগাযোগসহ ব্যাপক সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। যার ফলে সর্বস্তরের মানুষ সুফল পেতে শুরু করেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর