ভিত্তিপ্রস্তরেই থেমে আছে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীরহাট নৌবন্দর। এ নৌবন্দরের কার্যক্রমের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার কোটি মানুষের আরও সহজ নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার স্বপ্ন পূরণ অনেকটা থমকে আছে। জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখতে চান সচেতন মহল। জেলা প্রশাসক বলছেন, নৌ বন্দরের উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। আর স্থানীয় সংসদ সদস্য বলছেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের দাবি পূরণ করেছে। নৌবন্দরসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে ভোলা-বরিশালসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার কোটি মানুষের সহজ নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো লক্ষ্মীপুর সদরের মজু চৌধুরীরহাট। এরই মধ্যে ফেরি ও লঞ্চ সার্ভিস চালু হয়েছে এ নৌ রুটে। এতে পণ্য পরিবহনসহ যোগাযোগব্যবস্থার কিছুটা সুফল পাচ্ছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ্মীপুর সফরে এসে মজু চৌধুরীরহাটকে নৌবন্দর ঘোষণা করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তারা লক্ষ্মীপুর সফর করেন। নদী খননের (ড্রেজিং) কাজ শুরু হয়। পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় ঢাকা-লক্ষ্মীপুর লঞ্চ সার্ভিস। শত কোটি টাকা ব্যয়ে আশপাশের সড়কগুলোও প্রশস্ত করা হয়। কিন্তু বন্দর কার্যক্রম নিয়ে ধোঁয়াসা যেন কাটছেই না। সার্ভেসহ জমি অধিগ্রহণে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই এখন। তবে এ অঞ্চলের মানুষের দাবি, অর্থনৈতিক গতি বাড়ানোসহ পণ্য পরিবহন খরচ কমাতে নৌবন্দর কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কেউ কেউ বলছেন, নৌবন্দর কার্যক্রমের সঙ্গে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য ফেরানোর আশায় রয়েছেন তারা। লক্ষ্মীপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি শংকর মজুমদার জানান, বন্দর বাস্তবায়ন হলে জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার সঙ্গে দক্ষিণ অঞ্চলের যুগান্তকারী পরিবর্তন সৃষ্টি হবে। এতে দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে অঞ্চলটি। দ্রুত বন্দর বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি। জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, নৌবন্দর উন্নয়নের জন্য এরই মধ্যে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, অতিরিক্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান ঘাট এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন। নদীপথ স্বাভাবিক রাখতে ড্রেজিং কাজ করা হচ্ছে। তিনি আশা করেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এটি পূর্ণাঙ্গ বন্দরে রূপান্তর হবে- এমনটি প্রত্যাশা করেন এ কর্মকর্তা। লক্ষ্মীপুর-২ রায়পুর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছরের জেলাবাসীর দাবি কোনো সরকার পূরণ করতে পারেনি। ২০১৭ সালে মজু চৌধুরীরহাটকে নৌবন্দর ঘোষণা করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নৌবন্দর ঘোষণার পর থেকে এখানে লক্ষ্মীপুর-ভোলা লঞ্চ সার্ভিস, ফেরি সার্ভিস ও লক্ষ্মীপুর-মজু চৌধুরীরহাট সড়ক ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু উন্নয়ন করা হয়েছে। বন্দর বাস্তবায়নে চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।