সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শেরপুরের নদীগুলো আজ ছবি!

মাসুদ হাসান বাদল, শেরপুর

শেরপুরের নদীগুলো আজ ছবি!

একসময় শেরপুর পৌর শহরের শান্ত-স্নিগ্ধ টলটলে পানি ছিল মৃগী নদীতে। গরমে মানুষের প্রশান্তি ছিল মৃগীর ¯িœগ্ধ বায়ু। মানুষের নির্মল বিশুদ্ধ বায়ু সেবনের উপযুক্ত স্থান ছিল এই নদী। এখন যেন আধুনিক শহরের বর্জ্যরে স্থান। শহরের বিশাল ড্রেন নামিয়ে দেওয়া হয়েছে মৃগী নদীতে। বিলীন হয়েছে নদীর সুস্বাধু মিঠা পানির মাছ। পানির দুর্গন্ধে নদীটি এখন রোগীতে পরিণত হয়েছে। আর প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র এখন শুধুই খাল। আর মালিঝি, সোমেশ্বরী, চেল্লাখালী, মহারশি, ভোগাই, খারুয়া, দর্শা, ভুরাঘাট, বলেশ্বরী, সুতি, মরাখড়িয়া, ভোগবতী, খড়িয়া এখন আধামরা হয়ে বেঁচে আছে। বিখ্যাত নেতাই নদী মরে গেছে অনেক আগেই। মানুষের জন্য প্রকৃতির বিশেষ দান পূর্বের নদ-নদীর সঙ্গে তুলনা করে বর্তমান অবস্থাকে মুরব্বিরা বলেছেন শেরপুরের নদীগুলো এখন শুধুই ছবি। নদীর বুক চিরে চলছে আবাদ, নির্মাণ করা হয়েছে ঘর-বাড়িসহ নানা অট্টালিকা। ১৫০ বছর আগের ইতিহাসে ১৬টি প্রধান নদী ও ৯টি ক্ষুদ্র নদীর কথা উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীন ঐতিহাসিক গ্রন্থে যে ১৬টি প্রধান নদীর নাম উল্লেখ রয়েছে, তার মধ্যে মরা বা আধামরা হয়ে ৮টি নদী এখনো কালের সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছে। অন্য ৮টি নদী শুধুই ইতিহাস। যে ৮টি নদী কোনো রকম টিকে আছে তা হলো- ব্রহ্মপুত্র, মৃগী, সোমেশ্বরী ও মালিঝি। অপর দিকে ‘দশানি’ নামে নতুন একটি নদীর সৃষ্টি হয়েছে। শেরপুরের একসময়ের বিখ্যাত নেতাই নদী সাবেক শেরপুর পরগনায় ৪৩ মাইল দীর্ঘ বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। দৈর্ঘ্য মাইল অনুযায়ী শেরপুরে মৃগী ছিল ২৯, ব্রহ্মপুত্র নদ সাড়ে ১০, মালিঝি সাড়ে ৩৫, চেল্লাখালি ১২, সোমেশ্বরী সাড়ে ১৮, মহারশি ১৫ মাইল এবং ভোগাই নদী ১৬ মাইল। নদীগুলো পরিমাপ করার কোনো অবস্থা নেই। নকলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুতাখালি নদী ঘিরে চন্দ্রকোনায় গড়ে উঠেছিল বিশাল বন্দর। আজ সেই সুতি এখন প্রভাবশালীদের মৎস্য খামারে পরিণত হয়েছে। নদীতে বালু ফেলে ভরাট করে চলছে উন্নয়ন। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরাপাহাড় থেকে কংস নদ হয়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে এসে এর নাম হয়েছে ভোগাই। এই ভোগাই ময়মনসিংহের ফুলপুরের খড়িয়া নদীই আবার ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশেছে। দীর্ঘদিনের দখল আর নানা উৎপাতে ভোগাই এখন বিলীনের পথে। বিশাল পাহারঘেরা ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢলের পানি ধারণ করত এই নদী। নদী ভরাট হওয়ায় মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল এখন ভোগাই, চেল্লাখালি, সোমেশ্বরী, মহারশি নদীর দুই কূলে রৌদ্র মূর্তিতে আবর্তিত হয়। বেশির ভাগ নদীতে পানি না থাকায় হেঁটেই চলাচল করতে হয় পথচারীদের। তাছাড়া পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে উজান থেকে আসা বালির আস্তর পড়ে ভাটির দিকের শত শত একর ফসলি জমি অনাবাদি হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। অপরদিকে অপরিকল্পিত এবং অবৈধভাবে বালু তোলার প্রতিযোগিতা নদীগুলোকে প্রতিদিন করছে শ্রীহীন।

নদী তার প্রাকৃতিক গতি হারানোর ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। তবে সরকার ব্রহ্মপুত্র ও কাটাখালী নদীর কিছু অংশে খননে হাত দিলেও গতি কম। বিশিষ্ট জনদের দাবি নদী সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি ও নদী সুরক্ষায় সংগঠিত হওয়া জরুরি। মিলিত উদ্যোগ ও সক্ষমতা আমাদের নদী বাঁচাতে সহায়তা করবে। নদী রক্ষা আইনের মাধ্যমে নদী পুনঃদখদল ও খনন করা দরকার। নদী বাঁচাতে না পারলে পরিবেশ দূষণের মতো বিপর্যয় আরও ভয়াবহ হবে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবডিবিশনাল প্রকৌশলী মো. সাহজাহান বলেছেন ইতোমধ্যে শেরপুরের দুটি নদীর একটি খনন কাজ শেষ হয়েছে। অপরটির খনন কাজ চলছে। মৃগী নদীর নকলা অংশের ১০ কিলোমিটার ড্রেজিং হয়েছে। জাতীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড দেশের সম্মিলিত ছোট নদী খাল সংস্কারের জন্য (প্রতি উপজেলায় পাঁচটি ছোট খাল-নদী) একটি বড় প্রকল্প জমা দিয়েছে। এই প্রকল্প পাস হলে শেরপুর জেলার অন্তত ২৫টি ছোট নদী, খাল সংস্কার হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর