ফরিদপুরের মধুখালীর বাগাট ইউনিয়নের রায়জাদাপুরে মধুমতী নদী তীর থেকে রাতে ভেকু মেশিন দিয়ে দেদার কাটা হচ্ছে মাটি। ট্রাক ভরে এ মাটি নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। ফলে মধুমতীর বুকে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ চরের ফসলি জমি বিনষ্ট হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে প্রভাবশালীরা লুট করছে নদীর মাটি। নিজেদের ভাটার ইট তৈরির পাশাপাশি আশপাশের ভাটায়ও বিক্রি করছে। প্রতিরাতে দেড় থেকে ২ লাখ টাকার মাটি বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটায় নষ্ট হচ্ছে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের এক ফসলি জমি। পাশাপাশি ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, রায়জাদাপুরের সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া মধুমতী নদীর ওপারে মাগুরা জেলার পালপাড়া ঘাট। এপারে রায়জাদাপুরে নদীর প্রায় দেড়গুণ জমিজুড়ে চর জেগেছে। স্থানীয় কৃষকরা চরে এক ফসলি শস্য রোপণ করেন। এবার সেই শস্য রোপণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাটি লুটকারীরা। স্থানীয়রা জানান, মধুমতী নদী তীরে গড়ে তোলা হয়েছে এমএনজেড ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা। এ ভাটার মালিকপক্ষের নেতৃত্বেই প্রতিরাতে ভেকু দিয়ে নদীর মাটি কেটে ট্রাকে ভরে নিজেদের ভাটায় মজুদ করার পাশাপাশি বাইরেও বিক্রি করা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে সারারাত মাটি কাটা হয়। নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, গত বছরের ৮ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিকুর রহমান চৌধুরী মাটি-বালু উত্তোলনকারীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করেন। এতেও দমেনি জড়িতরা। জানা যায়, মধুমতী নদীর এই স্থানে প্রতিরাতেই কাটা হয় দেড় থেকে ২ লাখ টাকার মাটি। প্রতি ট্রাক মাটি ৯০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হয়। মধুমতীর চরে ধানের চারা রোপণ করছিলেন আখের আলী নামে এক কৃষক। তিনি বলেন, বছরের ছয় মাস এখানে পানি থাকে না। তখন তারা চাষাবাদ করেন। যেভাবে মাটি কেটে নিচ্ছে তাতে আগামীতে আর এই জমি চাষ করতে পারব বলে মনে হয় না। এমএনজেড ব্রিকস মালিকদের একজন মিলন বিশ্বাস। তিনি প্রথমে অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেন। পরে রাতে ভেকু দিয়ে মাটি কাটেন কেন? এমন প্রশ্ন করলে বলেন, নদীপাড়ের ব্যক্তি মালিকানা জমি থেকে তারা মাটি কাটছেন। এসব জমি থেকে মাটি কাটার অনুমতি তাদের নেই বলে স্বীকার করেন। মধুখালীর ইউএনও আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, এ বছর মাটি কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। গত বছর মাটি কাটার অভিযোগে এমএনজেড ইটভাটাকে জরিমানা করা হয়েছিল। এবারও মাটি কেটে থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে ফরিদপুরের সালথায় ভেকু দিয়ে তিন ফসলি জমির ওপরিভাগের মাটি কাটা ও পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। উপজেলার একাধিক ইউনিয়নে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে ও পরিবেশ আইন না মেনে কৃষিজমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে জমি হারাচ্ছে উর্বরা শক্তি। গত বৃহস্পতিবার রাতে বল্লভদী ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে তিন মাটি ব্যবসায়ীকে ১৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন মাটি ব্যবসায়ী সমীর চন্দ্র বিশ্বাস, আবদুস শুকুর শেখ ও দুর্জয় কুমার বিশ্বাস।