দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে পানির হাহাকার চলছে। কৃষকরা তিন থেকে চার গুণ টাকা খরচ করেও বোরো জমিতে সেচ দিতে পারছেন না। ফলে হাওরে ফসল উৎপাদন কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। চাহিদা মতো পানি না পাওয়ায় চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাওর ও কৃষকদের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকরি কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে ক্রমান্বয়ে হাওরে বোরো উৎপাদন কমছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ি, বড়লেখা, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে হাকালুকি হাওরের অবস্থান। আয়তন ১৮১.১৫ হেক্টর। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এ হাওরে প্রায় ২৩৮টি বিল ও ১০টি নদী রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারে এ বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ৪৫০ হেক্টর। চাষাবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ৫৭ হেক্টর। এর মধ্যে হাওরে চাষাবাদ হয়েছে ২৭ হাজার হেক্টর। কয়েক লাখ কৃষক ও জেলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে হাকালুকি থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। হাওর অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষক ও বর্গাচাষিদের জীবন জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্ভল হাওরে উৎপাদিত এক ফসলি বোরো ধান। ওই ফসলের আয় দিয়েই তাদের পুরো বছরের সাংসারিক খরচ এবং ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ সব ব্যয় চলে। কৃষকরা ধারদেনাও মিটান ধান বিক্রির টাকা থেকে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বোরো ফসলের শীষ বের হওয়ার সময় এসেছে। কিন্তু নদী, নালা কিংবা বিল কোথাও পানি নেই। পানির জন্য হাহাকার করছেন কৃষকরা। বৃষ্টির অপেক্ষায় আছেন তারা। বোরো জমিতে সেচ দেওয়ার মতো সুবিধা না থাকায় কৃষকরা ফিতা পাইপ দিয়ে ৩-৪ হাজার ফুট দূর থেকে জমিতে পানি দিচ্ছেন। প্রতি ঘণ্টায় খরচ হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা। আবার অনেক কৃষক টাকা খরচ করেও পানি পাচ্ছেন না। পানির অভাবে বোরো জমি ফেটে চৌচির। ফসল মরে যাচ্ছে। কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ময়নুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে টাকা দিয়েও হাওরে পানি পাওয়া যায় না। উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষকদের ব্যয় কমাতে হাকালুকি হাওরে একটি স্লুইচগেট স্থাপন করা জরুরি। কৃষক নেতা রাজন আহমদ বলেন, বিল ইজারাদাররা নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ ধরেন। এ কারণে কৃষক পানি পাচ্ছেন না। ধানের শীষ বের হওয়ার সময় টাকা দিয়েও পানি পাওয়া যায়নি। মৌলভীবাজার কৃষি অধিদফতরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, হাকালুকি হাওরে স্লুইচগেট স্থাপনের বিষয়ে জেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা করব। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, বিষয়টি নিয়ে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে হাকালুকি হাওরে স্লুইচগেট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।