শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

পদ্মায় মাছের হাহাকার

দেবাশীষ বিশ্বাস, রাজবাড়ী

পদ্মায় মাছের হাহাকার

শুকনো মৌসুম এলেই পানি কমে যায় রাজবাড়ীর পদ্মা নদীতে। গত কয়েক বছর ধরে পদ্মার এমন চিত্র দেখছেন পদ্মাপাড়ের মানুষ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বর্তমানে পদ্মার মাঝখানে জেগে উঠেছে বালুচর। যে কারণে পদ্মায় মাছের হাহাকার শুরু হয়েছে। জেলেরা পেশা পরিবর্তন করছেন। এখন খোদ মাঝ পদ্মায় ধু-ধু বালুচর। এমনকি মাঝ পদ্মায় কৃষকেরা ফসল বুনছেন। অনেক বালুচরে আগাছা আর বনজঙ্গল তৈরি হয়েছে। এক সময় স্রোতস্বিনী পদ্মায় গর্জনে মাঝি-মাল্লারা অনেক সময় সাহস পায়নি পদ্মার বুকে তার খেয়া নৌকা চালাতে। জেলেরা সাহস পায়নি তাদের মাছ ধরা নৌকা চালাতে। পদ্মার তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল ব্যাহত হয়েছে। সেই পদ্মায় এখন শুকিয়ে একটি খালে পরিণত হয়েছে। রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বর্ষায় পদ্মায় ৩১ ফিট পানি থাকে। বর্তমানে (গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত) সেখানে বর্তমানে ৮ ফিট পানি রয়েছে। বেশির ভাগ জায়গার চর জেগেছে। পদ্মা সরু খালে পরিণত হয়েছে। একটি চ্যানেল দিয়ে ৮ ফিট পানি রয়েছে। সেখান দিয়ে নৌযান যাতায়াত করছে। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জন্য ভয়ঙ্কর সংকেত। গতকাল দুপুরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোদার বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ডজন খানেক নৌকা বেঁধে রেখেছেন জেলেরা। সেখান থেকে সোনাকান্দের বাবু খানের নৌকা ভাড়া করে মাঝ পদ্মায়। যেতে লাগে তিন মিনিট। বাবু খান বলেন, গ্রীষ্মে পদ্মার যৌবন এখন আর নেই। পদ্মায় অনেক চর জেগেছে। এখন আর সেভাবে মাছ পাওয়া যায় না। আমরা সাধারণত চরে যাত্রীদের নিয়ে যাই। জনপ্রতি ১০০ টাকা করে নিই। এ দিয়েই সংসার চলে। সত্যি কথা বলতে কি নদী তীরে মানুষের জীবন যাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। আমি এক সময় পদ্মায় মাছ ধরতাম। এখন নদীতে ঘুরতে আসা শৌখিন মানুষদের পদ্মায় ঘুরিয়ে বেড়াই আর রিক্সা চালাই। পদ্মায় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মায় এখন আর সেভাবে মাছ পাওয়া যায় না। নদীতে গেলে যে মাছ পাওয়া যায় তাতে ৪-৫ জন জেলের সংসার চলে না। সারা রাত বসে থাকলে হাজার খানেক টাকার মাছ বিক্রি করা যায়। জেলেরা এখন মাছ বিক্রি করা বাদ দিয়ে ইজিবাইক চালাচ্ছে। ইটভাটায় কাজ করছে।

সদর উপজেলা চন্দনী ইউনিয়নের পঞ্চানন বিশ্বাস নামে এক জেলে বলেন, পদ্মায় ৬-৭ মাস তেমন পানি থাকে না। তাই পদ্মায় সেভাবে নদীর  মাছ পাওয়া যায় না। পদ্মার মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। পদ্মার আকার পরিবর্তন হয়েছে। বর্ষার সময় পদ্মা আগ্রাসী রূপ ধারণ করে। আর শীতের সময় শুষ্ক পদ্মা। তিনি বলেন, ষাটের দশকে পদ্মায় সব সময় পানি থাকত। এখন পদ্মায় ধুধু বালুচর। গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ইউনিয়নের আক্কাস ব্যাপারী (৬৭) বলেন, পদ্মা আমাদের জন্য অভিশাপ। পদ্মায় আমার বাড়ি চারবার ভেঙেছে। অনেক চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন থাকে পদ্মা আর যমুনার মিলনস্থান কোথায়? আমরা সেই গোয়ালন্দের বাসিন্দা। যেখানে পদ্মা আর যমুনার সব সময় পানি থাকার কথা ছিল। এই রুট দিয়ে ফেরি চলাচল করে। বর্তমানে প্রায় দুই কিলোমিটার ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে যেতে হয় ফেরিগুলোকে। শুধু পদ্মায় পানি না থাকার কারণে এই সমস্যা। রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, পদ্মায় পানি না থাকার অন্যতম একটি কারণ সবারই জানা। আসলে আমরা পানির সঠিক হিসাবে বুঝে নিতে পারিনি। পাশর্^বর্তী দেশ আমাদের পানির ন্যায্য হিসাব দেয় না। একদিন এই পানি সমস্যার হয়ত সমাধান হবে। তবে পদ্মার শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে পানি দরকার। পদ্মাপাড়ের জীবনযাত্রার শুধু পানির কারণেই পরিবর্তন হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর