চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে চাঁদপুর ইরিগেশন প্রকল্প বাঁধ নির্মাণের ফলে এক সময়ের খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদী নাব্যতা হারিয়ে এখন মৃতপ্রায়। একটি চক্র নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে সেচের পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে। সেই সঙ্গে ফরিদগঞ্জ-কেরোয়া ব্রিজের নিচে নদীর উভয় পাশে দীর্ঘদিন বাজারের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নদীতে বর্জ্য, ধুলা-বালি ও উচ্ছিষ্ট ফেলে চলছে। এমনকি কসাইরা নদীর ওপর পাকাঘর নির্মাণ করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে গবাদি পশু জবাই করে রক্ত, মলমূত্র নদীতে ফেলছে। এতে স্থানীয়রা উৎকট দুর্গন্ধ ও রোগ-বালাইয়ের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ছেন। বর্তমানে নদীর কেরোয়া অংশে তলদেশ অনেকখানি ভরাট হয়ে পরিবেশ ও প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতিসাধনসহ সেচ প্রক্রিয়া বন্ধের উপক্রম হচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্রিজের দুই তীরের অর্ধেকাংশ প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। স্থানীয়দের ধারণা, আস্তে আস্তে নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনায় চক্রটি এ কাজটি করছে। তারা প্রশাসনের কাছে নদীতে বর্জ্য অপসারণ বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, ফরিদগঞ্জ বাজারের দুই দিকে ডাকাতিয়া নদীর শাখা প্রবাহিত। ফরিদগঞ্জ বাজার সংলগ্ন উত্তর পাশে ডাকাতিয়া নদীর ওপর কেরোয়া সেতুটি নির্মিত। গভীর রাতে দুই তীর থেকে সারিবদ্ধ ভ্যানে বর্জ্য, ধুলা-মাটি ও ভারী আবর্জনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। চক্রটি প্রথমে বর্জ্য পরে মাটি ফেলে নদী ভরাট কার্যক্রম সম্পন্ন করছে। ব্রিজের দুই প্রান্তে নির্মিত স্থাপনাগুলো সরকারি ভূমিতে কি না- রেকর্ডপত্র খতিয়ে দেখা এখন সময়ের দাবি। রাতে শ্রমিকদের সেখানে বর্জ্য ফেলতেও দেখা যায়। তাদের নিষেধ করলে উল্টো ধমক খেতে হয়। এতে নদীর তলদেশ সাত-আট ফুট ভরাট হয়ে গেছে। সেতুতে দাঁড়ালে নদীতে পানির বদলে শুধু আবর্জনাই দেখা যায়। অবৈধভাবে নদী ভরাটের এ কাজটি প্রায় দুই বছর ধরে চলছে। নদী ভরাট বন্ধ না হলে অচিরেই কেরোয়া ব্রিজের নিচে সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে কৃত্রিম বাঁধ সৃষ্টি হয়ে, পানি প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। কেরোয়া ব্রিজের নিচ দিয়ে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে রুমুর খাল হয়ে পাইকপাড়া, রূপসা ও গুপ্টির দুুুটি ইউনিয়নে পানি প্রবাহ চলে গেছে। এসব এলাকায় রুমুর খালের পানি গিয়ে আরও কয়েকটি খাল-বিলেও পড়েছে। এসব কৃত্তিম বাঁধের কারণে প্রতি বছর ইরি-বোরো ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে মারত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষকের মধ্যে পানির হাহাকার দেখা দিলে, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি)-সহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তখন প্রশাসনের নির্দেশে বাগাদি সøুইচ গেট দিয়ে পানি সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয়। জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে এমনটা করা হয়েছে। নদীতে তৈরি হওয়া নানা বাঁধ ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা না হলে সেচ প্রকল্পে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। ফরিদগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র আবদুল মান্নান পরান বলেন, কেরোয়া ব্রিজের নিচে কারা বর্জ্য ফেলছে জানি না। বর্তমানে পৌরসভার পক্ষ থেকে পাহারা দিতে লোক নিয়োজিত রেখেছি। যারা ডাকাতিয়া নদীতে বর্জ্য ফেলছে, তাদের ধরতে পারলে পৌর কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমুন নেছা বলেন, ব্রিজের দুই পাড়ে বর্জ্য আমার নজরে পড়েছে। বর্জ্য ফেলতে নিষেধ করলেও, কেউ শুনছে না। বাধ্য হয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। পৌর মেয়র, কাউন্সিলর ও বাজার ব্যবসায়ী কমিটির নেতাদের জানিয়েছি। তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। বর্জ্য অপসারণের জন্য এত বড় প্রকল্প আমার হাতে নেই। তবে আমি জেলা প্রশাসককে জানাব। সেখানে পরিকল্পিতভাবে কেউ বর্জ্য ফেলছে কি না, তা খতিয়ে দেখাব।