রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

কর্মচাঞ্চল্য নেই পালপাড়ায়

দেবাশীষ বিশ্বাস, রাজবাড়ী

কর্মচাঞ্চল্য নেই পালপাড়ায়

চৈত্র মাসের শেষ সময়ের জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকতেন পালপাড়ার বাসিন্দারা। কাদামাটিকে সম্বল করেই হরেক রকম খেলনা, ঘর সাজানোর জিনিস আর তৈজসপত্র বানাতেন পালপাড়ার কারিগররা। এক যুগ আগেও পয়লা বৈশাখ ঘিরে এ সময়টাতে দম ফেলার ফুসরত মিলত না জেলার বেশিরভাগ কুমারের। ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলত কর্মযজ্ঞ। এসব দিন এখন শুধুই স্মৃতি। দিন বদলের পালায় মাটির তৈরি এসব জিনিসের প্রয়োজনীয়তা যেন ফুরিয়ে গেছে। সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক, সিলভার, মেলামাইন ও চিনামাটির সামগ্রী। ফলে বাংলা নববর্ষ দরজায় কড়া নাড়লেও প্রাণচাঞ্চল্য নেই পালপাড়ায়। রাজবাড়ীর মধ্যে বালিয়াকান্দি উপজেলায় এক সময় সবচেয়ে বেশি মাটির পণ্য তৈরি হতো। এ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রাম ছিল বিখ্যাত। এখানে শতাধিক কারিগর তৈরি করতেন মাটির জিনিসপত্র। এখন অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। আবার বংশ পরম্পরায় কেউ কেউ এই শিল্প ধরে রেখেছেন। বালিয়াকান্দির জামালপুর ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ৮-১০টি পরিবারের সদস্যরা নিপুণ হাতে মাটির তৈরি ফুলদানি, হাতি, ঘোড়া, গরু, পাখি, পুতুল, ব্যাংক, মাছ, পেঁপে, কলাসহ বিভিন্ন খেলনা তৈরি করছেন। পাশাপাশি রং তুলির শেষ আঁচর দিচ্ছেন। পালপাড়ার বাসিন্দা অশোক কুমার বলেন, এক সময় পাইকাররা বৈশাখের আগে আমাদের এখানে ভিড় করতেন। এখন আর পাইকার আসেন না। আমি নিজেই এগুলো তৈরি করে বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করি।

অঞ্জনা পাল বলেন, পালপাড়ায় এমন দুরবস্থা হবে কোনো দিন কল্পনা করিনি। এখন চাহিদামতো আঠাল মাটি পাওয়া যায় না।

দূরের গ্রাম থেকে মাটি আনতে হয়। মাটির অনেক দাম, শ্রমিকেরও দাম বেড়েছে। ফলে পুরাতন এই পেশা ত্যাগ করেছেন অনেকে। স্থানীয়রা জানান, কাদামাটির এ শিল্প হারিয়ে হওয়ার পথে। পুরো পালপাড়ায় দুই-একটা পরিবার হাতি, ঘোরা, পুতুলসহ তৈজসপত্র তৈরি করেন। বেচাবিক্রি তেমন হয় না। এ পেশার মানুষের জীবন ধারণ করার মতো সচ্ছলতা নেই। ফলে বৈশাখেও পালপাড়ায় পাইকারদের আনাগোনা নেই। হারিয়ে গেছে এখানকার প্রাণচাঞ্চল্য। রাজবাড়ীর কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতীম দাস বলেন, বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে হবে। এ জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। দেশি কৃষ্টি আর স্বকীয়তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মাটির বাসন কোসন। সরকার এদিকে নজর না দিলে এ শিল্প পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর