বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বগুড়ায় সড়কে রেকার বাণিজ্য

পুলিশ বলছে, ঈদ সামনে বলে নয়, নিয়মিত মামলায় জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ায় সড়কে রেকার বাণিজ্য

টাকা নেওয়ার পর পুলিশের দেওয়া স্লিপ

বগুড়ার হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়ক থেকে ব্যাটারিচালিত ছোট ছোট বাহন আটক করে রেকার বিল আদায় করছে। বিকল ও দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবহার্য গাড়ি ‘রেকার’ রক্ষাণাবেক্ষণ খরচ তোলা হচ্ছে গাড়িপ্রতি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। অভিযোগ উঠেছে, ঈদ সামনে রেখে হাইওয়ে পুলিশের রেকার বাণিজ্য এখন রমরমা। তবে হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিওনের পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলছেন, ঈদ সামনে রেখে নয়, নিয়মিত মামলা দায়ের করা হচ্ছে। জানা যায়, গত ৫ এপ্রিল শেরপুর শহরের কলেজরোড এলাকায় একটি ইজিবাইক আটক করেন হাইওয়ে পুলিশের এক সদস্য। মহাসড়কে ইজিবাইক নিষিদ্ধ। তাই জরিমানা করা হলো ২ হাজার ৫০০ টাকা। ইজিবাইকের মালিককে যে রশিদ দেওয়া হয় তাতে রেকার বিল ২ হাজার ও জ্বালানি তেল বাবদ ৫০০ টাকা লেখা রয়েছে।

ইজিবাইক চালক হাশেম আলী জানান, তাঁর ইজিবাইক চলন্ত অবস্থায় আটক করা হয়। তাই রেকার ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন হয়নি। এমনকি আশপাশে কোনো রেকারও ছিল না। অথচ তাঁর কাছ থেকে রেকার ভাড়া নেওয়া হলো। তিনি বলেন, বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। এরপরও হাইওয়ে পুলিশের দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করেছি। কারণ, টাকা না দিলে তো আর সড়কে গাড়ি চালাতে পারব না। অটোভ্যান চালক আবদুর রহমান জানান, গত রবিবার সকালে তরমুজবোঝাই করে দশমাইল যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে মহাসড়কের হাজিপুরে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা তার ভ্যানটি আটক করেন। সেই সঙ্গে রেকার ভাড়া বাবদ বিল আড়াই হাজার টাকা দিতে বলেন। আমার কাছে টাকা না থাকায় মহাজনের নিকট থেকে বিকাশে টাকা ঋণ করে এনে রেকার বিল দিয়ে গাড়িটি ছাড়িয়ে নিয়েছি। এদিকে সোলায়মান হোসেন নামের অটোরিকশা চালক বলেন, কয়েক মাস আগে তার গাড়িটি হাইওয়ে পুলিশের লোকজন আটক করে। পরে ৩ হাজার টাকা দিয়ে অটোরিকশাটি ছাড়িয়ে নিয়ে আসি। কয়েকজন ইজিবাইক চালক বলেন, মাসিক ভিত্তিতে চুক্তির পর তারা মহাসড়কসহ পুরো শহরে নির্বিঘ্নে গাড়ি চালাতে পারেন। এজন্য তাদের স্টিকার দেওয়া হয়। এসব স্টিকারের অনেকগুলো আবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের নামে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো স্টিকার দেওয়া হয় না। তবে, যে চালক মাসিক চুক্তিতে যায়, তার মোবাইল নম্বর হাইওয়ে পুলিশের কাছে থাকে। তাই যেসব গাড়ি মাসিক করা সেগুলো হাইওয়ে পুলিশের নাকের ডগার ওপর দিয়েই চলে। আর যারা মাসিক টাকা দেয় না তাদেরই জরিমানা করা হয় বলে জানান তারা।

সংশ্লিষ্ট যানবাহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন এ উপজেলায় চার শতাধিক সিএনজি, ছয় শতাধিক অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করে বলে জানা যায়।

সরেজমিন দেখা যায়, শেরপুর শহরের ধুনটমোড়, কলেজরোড ও গাড়িদহ এলাকায় সকাল থেকেই মহাসড়কে অবৈধ যান আটক অভিযান চালাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। এ সময় সিএনজি, অটোরিকশা, ইজিবাইক আটকে রেকার ভাড়ার রশিদ দিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়। পুলিশের পাশাপাশি তাদের নিয়োগ করা দু-তিনজন যুবককেও গাড়ি জব্দের কাজে দেখা যায়। আটক করা বেশির ভাগ গাড়ি রসিদ ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়। হাইওয়ে পুলিশের বগুড়ার শেরপুর গাড়ীদহ ক্যাম্পের ইনচার্জ জয়নাল আবেদীন জানান রেকার বিল আদায়ের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন স্যারেরা জানেন। আমি ঢাকায় থাকাকালে যান্ত্রিক ক্রটির কারণে ওই রশিদ ব্যবহার করা হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিওনের পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানান, ঈদ সামনে রেখে নয়, নিয়মিত মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর