শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

দাবদাহে শঙ্কায় খামারিরা

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

দাবদাহে শঙ্কায় খামারিরা

কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন খামারে প্রাকৃতিক উপায়ে পশু মোটাতাজাকরণের কাজ চলছে। তবে তীব্র দাবদাহ ও লোডশেডিং থাকায় পশু নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে খামারিদের। খামারিরা জানায়, পশুখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি চলমান দাবদাহে পশুর স্ট্রোক রোধসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা এড়াতে বাড়তি পরিচর্যা নিতে হচ্ছে। ফলে বেড়েছে খরচ। এদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, তীব্র দাবদাহে পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খামারিদের করণীয়সহ প্রাকৃতিক উপায়ে পশু মোটাতাজাকরণ নিশ্চিতে খামারিদের সচেতন করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯ উপজেলার ১৫ হাজার খামারে চলছে পশু মোটাতাজাকরণের কাজ। এসব খামারে দেশীয় গরু, মহিষ, ছাগলের পাশাপাশি কোরবানিযোগ্য ১ লাখ ২১ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির পশু প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিদিন এসব পশুকে ঘাস, খড়, খইল, ভূষি, সাইলেসসহ প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হচ্ছে।

খামারিরা জানিয়েছেন, খামারে ৬০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাক মূল্যের পশু রয়েছে। তবে চলমান তীব্র দাবদাহ ও ঘনঘন লোডশেডিং হওয়ায় পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে দিনের বেশির ভাগ সময় জেনারেটরের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে পশুখাদ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ার তাদের খরচ অন্যান্য বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এ ছাড়াও সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশের চিন্তাও ভাবিয়ে তুলছে তাদের। তারা জানান, বাড়তি খরচে পশু লালন করার পর সীমান্ত দিয়ে ভারতের গরুর অবৈধ চালান এলে খামারিদের পথে বসতে হবে। নিউ প্রিন্স ডেইরি ফার্মের ম্যানেজার জসীম উদ্দিন জানান, প্রতি বছরই খামারে গরু, মহিষসহ বিভিন্ন কোরবানিযোগ্য পশু লালন-পালন করা হয়ে থাকে।

 তবে এ বছরের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। একদিকে মারাত্মক গরম আর অন্যদিকে দিনের বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। এতে পশুর শরীরের তাপমাত্র নিয়ন্ত্রণে ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জেনারেটরের নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়াও পশুগুলোকে দিনে ৬-৭ বার গোসল করাতে হয়ে। পাশাপাশি খইল, ভূষি, সাইলেসসহ সবধরনের পশুখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে অন্তত দ্বিগুণ। আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। রুপচাঁন বিবি ডেইরি খামারের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম জানান, ঈদ সামনে রেখে গত ৬ মাস ধরে দেশীয় জাতের গরু ও মহিষ পালন করছি। অত্যধিক গরমের কারণে পশু কখন স্ট্রোক করে ফেলে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। ঘনঘন লোডশেডিং থাকায় প্রতিদিন জেনারেটর দিয়ে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিন ২০ লিটার করে জ্বালানি তেলের প্রয়োজন পড়ে। সরকার অবৈধ গরুর প্রবেশ রোধে কঠোর অবস্থানে থাকলেও একটি মহল নানা কৌশলে সীমান্তের কাঁটাতার গলিয়ে দেশে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু এনে থাকে। এতে উৎপাদিত পশুর ন্যায্যমূল্য থেকে আমরা বঞ্চিত হই। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মে. ইকবাল হোছাইন বলেন, জেলায় থাকা খামারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি খামারিরা যাতে তাদের পশু নিরাপদে বিপণন করতে পারে সে জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চোরাই গরু বেচাকেনা বন্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ১ লাখ ৪০ হাজার হলেও খামারে ১ লাখ ২১ পশু মজুদ রয়েছে। অবশিষ্ট পশুর ঘাটতি আশপাশ জেলা থেকে আনা পশু দিয়ে চাহিদা পূরণ করা হবে। প্রতিটি খামারে যাতে প্রাকৃতিক উপায়ে পশু মোটাতাজাকরণ নিশ্চিত হয় সে বিষয়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে। দাবদাহে পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দৈনিক ২-৩ বার গোসল করানোসহ তাপ নিয়ন্ত্রণে খামারিদের সচেতন করা হচ্ছে। বর্ডার পেরিয়ে অবৈধ পশুর অনুপ্রবেশ রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর