মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হাতুড়ে ডাক্তারদের দৌরাত্ম্য

ভূতুড়ে ব্যবস্থাপত্রে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর ও ফরিদুপরের অলিগলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে হাতুড়ে ডাক্তার। এদের বেশির ভাগই নামের সঙ্গে ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার করে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দেন। এসব ডাক্তারের ভূতুড়ে চিকিৎসায় বিপাকে পড়ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, এমবিবিএস না হলে নামের আগে ডা. লেখা এবং রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, কমপক্ষে এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্তরা ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার পদবি লিখতে পারবেন না। অথচ এসব পল্লী চিকিৎসকের অনেকেই প্রেসক্রিপশন প্যাডে নামের আগে ‘ডাক্তার’ ডিগ্রি লাগিয়ে রোগীদের জটিল রোগের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। সরেজমিন দেখা যায়, ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের শরৎনগর বাজারে সদর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে একটি ওষুধের দোকানের সামনে অনেক রোগী ভিড় করেছেন। ভিতরে চেম্বারে রোগী দেখছেন শ্রী গজেন্দ্রনাথ সরকার নামে এক ব্যক্তি। তিনি একজন পল্লী চিকিৎসক বলে জানা গেছে। অথচ তিনি তার ছেলে সুমন কুমার সরকারের প্রেসক্রিপশন প্যাড ব্যবহার করে ব্যবস্থাপত্র দেওয়াসহ জটিল রোগের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবস্থাপত্রে লেখছেন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধও। চেম্বারের সামনে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদেরও অবস্থান করতে দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দিলপাশা ইউনিয়নের পাটুল বাজারে প্রতিমা মেডিকেল হল নামে একটি ওষুধের দোকান রয়েছে গজেন্দ্রনাথ সরকারের। তিনি নামের সঙ্গে ব্যবহার করেন (আরএমপি) সরকারি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, ঢাকা। এ ছাড়া তার আর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট নেই। তিনি প্রতিদিন ৫০ জনেরও বেশি রোগীর চিকিৎসা দেন। তার ছেলে সুমন কুমার সরকারের প্রেসক্রিপশন প্যাডে ডিএমএফ (ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ, ঢাকা), বিএমডিসি রেজি. নম্বর-ডি-৮৮৮০ লেখা রয়েছে। শরৎনগর বাজারে চিকিৎসায় ব্যস্ত লাকী মেডিকেল হলের স্বত্বাধিকারী আবদুর রশিদ। তার এমবিবিএস ডিগ্রি না থাকলেও প্রেসক্রিপশন প্যাডে ‘ডা.’ ডিগ্রি ব্যবহার করেন। ভাঙ্গুড়া বাজারে নাবিল ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী ছাইদুল ইসলাম। তিনি শিশু বিশেষজ্ঞ না হলে ও নবাজতক ও শিশুসহ সব রকম জটিল রোগের ব্যবস্থাপত্র দেন। প্রতিদিন তিনি ১০০ জনেরও বেশি রোগীর চিকিৎসা দেন। পুরাতন থানা ভবনের সামনে বসেন বাকি বিল্লাহ। তার সেখানে ওষুধের দোকান রয়েছে। তিনি নামের আগেও ব্যবহার করছেন ‘ডা.’ ডিগ্রি। তিনি রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধও লিখে দিচ্ছেন। ভুল চিকিৎসা ও মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের কারণে হরহামেশাই গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।

তবে নগেন্দ্রনাথ বলেন, সারা দেশে পল্লী চিকিৎসকরা নামের আগে সবাই ডা. লিখে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন, তাই আমিও লিখি। আসলে নীতিমালা থাকলেও কেউ বিষয়টি আমলে নেয় না। তাদের দেখাদেখি আমিও করছি।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খানম বলেন, এমবিবিএস না হলে নামের আগে ডা. লেখা এবং রোগীকে ব্যবস্থাপত্র লেখার কোনো সুযোগ নেই। যেসব পল্লী চিকিৎসক ডাক্তার পরিচয় দিয়ে রোগীকে চিকিৎসাপত্র লিখে দিচ্ছেন খোঁজখবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 

সর্বশেষ খবর