ফেনীতে সুপেয় পানি ও ফসলি জমির সেচসংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। জেলায় সরকারি-বেসরকারিভাবে স্থাপিত প্রায় ২ লাখ নলকূপ থেকে পানি উঠছে না। বিকল্প উৎস না থাকায় শহর থেকে গ্রামে পানির অভাবে দেখা দিয়েছে জনদুর্ভোগ। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ফেনীতে সরকারি নলকূপের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৮১১টি। এর মধ্যে ৯ হাজার ৮৭১টি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। চালু থাকা ২৬ হাজার ৯৪১টিরও প্রায় অর্ধেকে এখন পানি উঠছে না। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপিত দুই লক্ষাধিক অগভীর নলকূপেরও অধিকাংশে মিলছে না পানি। দুই মাসের বেশি সময় ধরে ভূগর্ভের পানি না ওঠায় ৫০ হাজার নলকূপ একেবারে অকেজো হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা কাজী মহিউদ্দিন বলেন, গ্রীষ্মকাল এলে বাড়ির অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। সব কাজে পানির প্রয়োজন হয়। আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সদর ইউনিয়নের নিলখী গ্রামের জসিম উদ্দিন বলেন, বাড়ির আশপাশের টিউবওয়েলের একটিতেও মিলছে না পানি। নারী-পুরুষ সবার খাবার ও রান্নাবান্নার পানি সংগ্রহে দুর্ভোগের শেষ নেই। তারা পাশের সিলোনিয়া নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে নানা কাজে ব্যবহার করেন। একই গ্রামের খায়েরেন্নেছা পুষ্প বলেন, কয়েক বছর ধরে এ সময়ে আমরা পানির জন্য কষ্ট করি। অজুর পানিও অন্য স্থান থেকে নিয়ে আসতে হয়। কলগুলো নষ্ট, পানি উঠে না। কষ্টে জীবন কাটছে। সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের আরিফ হোসেন বলেন, বাজারে তিনটি চাপকল ও ১০-১২টি পানি তোলার মোটর রয়েছে। এগুলোর কোনোটিতে পানি ওঠে না। আশপাশে অনেক টিউবওয়েলেরও একই অবস্থা। কাজিরবাগ ইউনিয়নের রানীরহাট এলাকার কৃষক দিদারুল আলম জানান, আমাদের জমিতে স্কিমধানের চাষ করেছি। পানির অভাবে ধানের থোড় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পুকুর, জলাশয় ও খালেও পানি নেই। সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সামনে ফসল উৎপাদনে চরম সংকট হতে পারে।
ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর এলাকার খোকন চন্দ্র পাটোয়ারী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরের গভীর নলকূপটি তিন বছর ধরে নষ্ট, পানি ওঠে না। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। সরকার যদি বিকল্প ব্যবস্থা করে সমস্যার সমাধান করে তবে জনগণ উপকৃত হবে। পরশুরামের কৃষক আহাদ মিয়া বলেন, দুই একর জমিতে ধান চাষ করেছেন। পানি না পাওয়ায় সব ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আশপাশের নদী-নালা-খাল-বিল শুকিয়ে গেছে, কোথাও পানি নেই।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি কাজে ভূগর্ভস্থ পানির অধিক ব্যবহারের ফলে প্রতি বছর লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ নলকূপে পানি ওঠে না। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য ব্যাপকহারে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা কমাতে হবে। ভূ-উপরিভাগের পানি কাজে লাগাতে হবে। তিনি জানান, জেলার ছয় উপজেলার অগভীর নলকূপের মধ্যে ৭০ ভাগ এবং গভীর নলকূপের ২০ ভাগে পানি উঠছে না। বিকল্প ব্যবস্থাও নেই। এজন্য দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এখন বৃষ্টিই একমাত্র ভরসা।