চিকিৎসক সংকটসহ নানান সমস্যায় খুঁড়িয়ে চলছে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। ৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক দিয়ে চলছে ২৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। ৫৮ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন ২০ জন। জরুরি বিভাগে মেডিকেল অফিসারের চারটি পদই শূন্য রয়েছে। এসব কারণে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা-সেবাবঞ্চিত দক্ষিণাঞ্চলের ২৫ লাখ মানুষ। স্থানীয়রা জানান, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অসংখ্য চর ও দ্বীপবেষ্টিত এ জেলার প্রায় ১৭ লাখ মানুষের চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা ২৫০ শয্যার এ হাসপাতাল। চরাঞ্চলে রয়েছে প্রায় ৫ লাখ মানুষ। এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন পার্শ্ববর্তী বরগুনা জেলার রোগীরা। সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, পটুয়াখালী ১০০ শয্যা হাসপাতালটি ১৯৯৬ সালে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর নতুন জনবল কাঠামো অনুযায়ী হাসপাতালটিতে তত্ত্বাবধায়কসহ ৫৮ জন চিকিৎসকের পদ থাকার কথা। কর্মরত আছেন ২০ জন। এর মধ্যে সহকারী পরিচালকের পদটি শূন্য। সিনিয়র কনসালট্যান্ট ১০টি পদ থাকলেও শুধু গাইনি ছাড়া অন্য ৯টি পদই শূন্য। জুনিয়ার কনসালট্যান্ট ১২টি পদে কর্মরত আছেন চারজন। আবাসিক ফিজিশিয়ান ও আবাসিক সার্জন পদ দুটি শূন্য। প্যাথলজিস্ট ও রেডিওলজিস্ট দুটি পদ শূন্য। অ্যানেসথেটিস্ট ৩টি পদ, সবকটিই শূন্য। মেডিকেল অফিসারের ১০টি পদ, কর্মরত আছেন চারজন। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ঠিক সময়ে চিকিৎসক পাওয়া যায় না। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সরকারি ওষুধ ঠিকভাবে দেওয়া হয় না। আন্তবিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীদের তেমন কোনো ওষুধ দেওয়া হয় না হাসপাতাল থেকে। গজ, লিকোপ্লাস্ট, ডিসপোজাবল সিরিঞ্জ, তুলাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র রোগীদের জন্য সরকারি বরাদ্দ থাকলেও তা পান না রোগীরা। এ ছাড়া তালিকা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন হাসপাতালে ভর্তি থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোগী ও স্বজনরা। চরাঞ্চল থেকে সেবা নিতে আসা রোগীরা জানান, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে জেলা শহরে চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তি পোহাতে হয়। জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সাধারণ রোগীদেরও চিকিৎসকরা নানান অজুহাত দেখিয়ে রেফার করেন বরিশাল মেডিকেল কলেজে অথবা ঢাকায়। কোনো কোনো চিকিৎসক আবার শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে ভালো চিকিৎসা পাওয়ার লোভ দেখিয়ে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে। অন্তত ১ হাজার রোগী বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ ও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সেবা নিতে আসেন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মরিয়ম বেগম বলেন, আমার দেড় বছরের শিশুর ডায়রিয়া হয়েছে। সোমবার ভর্তি হয়েছি, কিন্তু বেড পাইনি। বাধ্য হয়েই মেঝেতে শিশুর চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে রোগী বেশি হওয়ায় এক বেডে দুই শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরেই পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল। ৬০০ রোগীকে আমরা নিয়মিত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। শয্যা সংকটে রোগীদের সেবা দিতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। ৫০০ শয্যা চালু হলে স্বাস্থ্যসেবার মান অনেক ভালো করতে পারব।