বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী বাগেরহাটের ছয় উপজেলায় চিংড়ি ঘেরের তীব্র লবণাক্ত জমিতে এবার বোরোর বাম্পার ফলনে বিপ্লব ঘটিয়েছেন কৃষক। মাটির গুণাগুণ বুঝে হাইব্রিড ও উফশী জাতের বোরো ধান আবাদ করায় এটা সম্ভব হয়েছে বলছেন তাঁরা।
কৃষি বিভাগ বলছে, জেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী রামপাল, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, সদর, কচুয়া ও মোংলা উপজেলার তীব্র লবণাক্ত ৩৬ হাজার ৭২৬ হেক্টর জমি চিংড়ি চাষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। ওই সব জমিতে বিগত বছরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত লবণাক্তসহিষ্ণু ব্রি ১০, ৬৭, ৯৭ ও ৯৯ জাতের বোরো ধান আবাদ করে কাক্সিক্ষত ফসল পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় কৃষক হাল ছেড়ে না দিয়ে এ মৌসুমে পূর্ব অভিজ্ঞতা ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে মাটির গুণাগুণ বুঝে হাইব্রিড ৫ ও ৮ এবং উফশী জাতের ব্রি ১০৩, ১০৭ ও ১০৮ বোরো ধান আবাদ করেছেন। শতকে প্রায় ১ মণ করে ধান উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। সব হিসাব পাল্টে দিয়ে এ ছয় উপজেলায় ২ লাখ ২৯ হাজার ৭৪৯ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। তীব্র লবণাক্ততা ও ফসলি জমিতে চিংড়ি চাষের কারণে খাদ্য ঘাটতির এ এলাকা শুধু বোরো আবাদেই এখন খাদ্যোৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষি বিভাগ জানায়, চিংড়ি ঘেরের মধ্যে রামপালে ৪ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে ৩৪ হাজার ১২৫, শরণখোলায় ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ৩০ হাজার ৯০, মোরেলগঞ্জে ৯ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে ৬৩ হাজার ৮২৬, সদরে ১০ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে ৭৬ হাজার ৩৩০, কচুয়ায় ৭ হাজার ৭৩৯ হেক্টর জমিতে ৫২ হাজার ১০ ও মোংলায় ৫২ হেক্টর জমিতে ৩৬৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। রামপালের হুড়কার কৃষক জবেদ আলী, শরণখোলার চাল রায়েন্দার আবুল হাসেম চাপরাশি, মোংলার চিলার রণজিৎ বিশ্বাস, কচুয়ার সোনাকুড়ের সালাম বেপারী, মোরেলগঞ্জের হেড়মার কবির হোসেন খান ও সদরের বেমরতা গ্রামের কৃষক আক্রাম শিকদার জানান, তাঁদের চিংড়ি ঘেরের পানিতে ২০ পিপিটির কাছাকাছি লবণাক্ততা থাকে। বিগত বছরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে চিংড়ি চাষের পাশাপাশি বোরো মৌসুমে ব্রি উদ্ভাবিত লবণাক্তসহিষ্ণু ব্রি ১০, ৬৭, ৯৭ ও ৯৯ জাতের আবাদ করে ফসল পাননি। এসব লবণাক্তসহিষ্ণু জাতের ধান ১৫ পিপিটি লবণাক্ততায়ও টিতে থাকতে পারে না। এ অবস্থায় পূর্ব অভিজ্ঞতা ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে চলতি বোরো মৌসুমে চিংড়ি ঘেরের জমিতে হাইব্রিড ও উফশী জাতের ধানের আবাদ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। বিগত বছরে কৃষক যে ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন এবার তা কাটিয়ে ওঠা গেছে। বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ রমেশচন্দ্র ঘোষ জানান, ‘খেতের মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে সঠিক বীজ নির্বাচন করায় এবার চিংড়ি চাষের তীব্র লবণাক্ত জমিতে কৃষক বোরো উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। কৃষি বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করছে। সবাই মিলে সফল হয়েছি। এর পরও এখনো এসব উপজেলায় চিংড়ি ঘেরের মধ্যে শত শত হেক্টর জমি পতিত রয়েছে।’ এবার বাম্পার উৎপাদন হওয়ায় কৃষক উৎসাহিত হয়ে আগামী মৌসুমে অনাবাদি, পড়ে থাকা চিংড়ি ঘেরের সব জমিতে বোরো চাষ করবেন।