দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ৩ হাজার সাঁওতাল ও তুরী পরিবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। হয়েছে স্বাবলম্বী। শুধু আয় বৃদ্ধির পথ নয়, সম্মিলিতভাবে সংগঠিত হওয়া, অধিকার আদায় ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়ার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে তারা। এসব পরিবারের নারীরা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলছেন, পরিচালনা করছেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। একে অপরের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
এমন তথ্য দিয়েছেন নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদনগর ইউনিয়নের ‘গোলাপগঞ্জ বাহির চাঁদ স্বনির্ভর দল’র সনমনি কিসলু, আরতি, শ্রীমতি শেফালী ও বিলকিস। তারা বলেন, একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা স্বাবলম্বী হয়েছি।’ সরেজমিন দেখা যায়, ১২১টি নারীভিত্তিক স্বনির্ভর গ্রুপ গঠন করা হয়েছে, যারা নিয়মিত সঞ্চয় করছে। নিজেদের মধ্যে থেকে সুদবিহীন ঋণ নিচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মুষ্টিচাল ভিত্তিক খাদ্য ব্যাংক পরিচালনা করছে। পরিবারগুলোর সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডের জন্য নগদ অর্থ, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা।
রঘুনাথপুর গ্রামের সনমনি কিসলু বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ায় দুই সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়ি। সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়, ঠিকমতো খাবার দিতে পারছিলাম না। তখন গরু ও ছাগল মোটাতাজাকরণ, হাঁস-মুরগি পালন ও সবজি চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেই। এককালীন ২০ হাজার টাকাও পাই। যা দিয়ে একটি গরু কিনি। এখন আমার তিনটি গরু, পাঁচটি ছাগল এবং অনেক হাঁস-মুরগি রয়েছে। সংসার ভালোভাবে চলছে, ছেলেমেয়ে স্কুলে যায়।’
একই গ্রামের দিনমজুর আরতি কিসলু বলেন, ‘সাঁওতালরা ব্যবসা করতে ভয় পান, সবাই ভাবে দোকান দিলে টিকবে না। সেই ভয় কাটিয়ে মুদি দোকান দিয়েছি এবং ভালো আয় করছি। ব্যবসার পাশাপাশি পাড়ার মানুষের বিভিন্ন সমস্যায় পাশে থাকি। সরকারি সেবা নিতে সহায়তা করি, কোথাও নারী নির্যাতন হলে প্রতিবাদ করি।’
দলনেত্রী বিলকিস খাতুন বলেন, ‘আগে জানতাম না ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা হটলাইন সেবাগুলোর সম্পর্কে। ইসলামিক রিলিফ আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করেছে।’ রঘুনাথপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরিন নাহার নিপা জানান, ইসলামিক রিলিফ সেনিটারি ভেন্ডিং মেশিন সুবিধা দিয়েছে, এতে ছাত্রীদের অনেক উপকার হয়েছে। বিনোদনগর ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, ইসলামিক রিলিফ এ এলাকায় যে কর্মকা পরিচালনা করছে, তার সঙ্গে আমরা শুরু থেকেই জড়িত। প্রান্তিক মানুষের খাদের কিনার থেকে তুলে এনে স্বাবলম্বী করার যে প্রক্রিয়া, তা নিসন্দেহে প্রশংসনীয়।