তৃণমূলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চার পৌরসভার মেয়র পদে একাধিক আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোনয়ন চেয়েছেন। দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টিতে কতিপয় নেতা নিজেদের প্রার্থীদের মনোনয়নের জন্য লেলিয়ে দিয়েছেন এমন অভিযোগ তৃণমূল পর্যায়ে। কারণ ইতিপূর্বে তৃণমূল পর্যায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে রহনপুর, শিবগঞ্জ ও নাচোল পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু দলের ক্রান্তিকালে রাজপথে না থাকা একাধিক সুবিধাবাদী নেতা মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করায় খোদ দলের মধ্যেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এদিকে গতকাল শনিবার সকালে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে জেলা আওয়ামী লীগ এক সভার আয়োজন করে। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মঈনুদ্দিন মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ এমপিসহ জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে তরুণ শিল্পপতি আওয়ামীলীগ নেতা সামিউল হক লিটন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মনোনয়ন চেয়েছেন। এছাড়া শিবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কারিবুল হক রাজিন এবং নিষ্ক্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা ময়েন খান মনোনয়ন চেয়েছেন। যদিও তৃণমূল পর্যায়ে পৌর কমিটি, উপজেলা কমিটি ও ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের মতামতের ভিত্তিতে ইতিপূর্বে মেয়র প্রার্থী হিসেবে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কারিবুল হক রাজিনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। একই অবস্থা রহনপুর পৌরসভার ক্ষেত্রেও। কারণ ইতিপূর্বে তৃণমুল মতামতের ভিত্তিতে বর্তমান রহনপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী বিশ্বাসের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু আজকের সভায় প্রার্থী হওয়ার জন্য অপর আওয়ামী লীগ নেতা জালাল উদ্দিন আহম্মেদ মুক্তি মনোনয়ন চেয়েছেন। অন্যদিকে নাচোল পৌরসভায় তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে আনোয়ার’ল ইসলাম ঝাইটনের নাম ঘোষণা করা হলেও আজ রয়েল বিশ্বাস নামে অপর এক যুবনেতা মনোনয়ন চেয়েছেন। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে দলের পরীক্ষিত নেতাদের দলীয় মনোনয়ন প্রদানের সিদ্ধান্ত হলেও কতিপয় সুবিধাবাদী নেতা দলে কোন্দল টিকিয়ে রাখতে প্রতি পৌরসভাতেই একাধিক প্রার্থী দিয়েছেন। তবে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় ওই সভায় কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে একাধিক প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠিয়ে তারা কেন্দ্রে লবিং করবে নিজেদের প্রার্থীর জন্য। এতে করে তৃণমূলের সিদ্ধান্ত অবমূল্যায়ন হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। একাধিক ব্যক্তির মনোনয়ন প্রসঙ্গে শিবগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য মোহা. গোলাম রাব্বানীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৮জনের মধ্যে ১৭জনের সম্মতি ছাড়াও উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রসাীদের হাতে হাত-পায়ের রগকাটার শিকার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কারিবুল হক রাজিনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া তিনি গত নির্বাচনে অল্প ভোটে বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি আন্দোলন-সংগ্রামে সব সময় মাঠে থেকেছেন। তাছাড়া তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতেই তাকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠেই ছিলেন না এমন একজন হঠাৎ করেই মনোনয়ন চাওয়ায় শিবগঞ্জ তৃণমূল আওয়ামীলীগে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। একই কথা জানালেন, গোমস্তাপুর-নাচোল-ভোলাহাট আসনের সংসদ সদস্য মোহা. গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস। তিনি জানান, তৃণমূল নেতৃত্বের মতামতের ভিত্তিতে বর্তমান রহনপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী বিশ্বাসের নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু প্রতিপক্ষ অপর প্রার্থী দাঁড় করিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ এমপির মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় তার মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।
বিডি-প্রতিদিন/২৯ নভেম্বর ২০১৫/শরীফ