মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে পাবনার সাঁথিয়ায় তার নিজ গ্রামে পৌঁছেছে। সকাল সোয়া ৬টায় লাশের গাড়িবহর সাঁথিয়ার ধোপাদহ ইউনিয়নের মনমথপুরে গ্রামে পৌঁছায়। মধ্যরাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর রাত দেড়টায় দুটি অ্যাম্বুলেন্স কারাফটক দিয়ে বেরিয়ে আসে, এর একটিতে ছিল জামায়াত আমিরের লাশ। সামনে-পেছনে র্যাব ও পুলিশের ছয়টি এবং কারা কর্তৃপক্ষের একটি গাড়ি।
একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের হোতা নিজামীকে বুধবার প্রথম প্রহরে ঢাকার কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এই যুদ্ধাপরাধী প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেননি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দণ্ড কার্যকরের আগে তার স্বজনরা কারাগারে গিয়ে শেষ দেখা করে আসেন। জামায়াতে ইসলামীর আমির নিজামী সপরিবারে ঢাকার বনানীতে থাকতেন। তবে তার দাফন তার গ্রাম পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুরে করার প্রস্তুতি চলছে।
কারাগার থেকে বেরিয়ে ফার্মগেইট, উত্তরা হয়ে বাইপাইল দিয়ে টাঙ্গাইল হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে পাবনার সাঁথিয়ায় যায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স। এজন্য মহাসড়কের গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ অংশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পাবনায়ও কড়া পাহারা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।
মনমথপুর মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে নিজামীকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
ফাঁসির রায় কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রাত ৯টার পর থেকেই সাঁথিয়া বাজার, মনমথপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় নেমে আসে সুনসান নীরবতা। এলাকায় পুলিশি টহলও রয়েছে।
সন্ধ্যার পর থেকে কবরস্থান পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু হয় বলে সাঁথিয়া থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান।
গ্রামে থাকা নিজামীর চাচাত ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পুলিশই মনমথপুর কবরস্থানে দাফনের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী নিজামী স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়ে সাঁথিয়া থেকে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, তাকে মন্ত্রীও করা হয়েছিল।
বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নেতৃত্ব দেওয়ার দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে আলবদর নেতা নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে এই বছরের ৬ জানুয়ারি আপিল বিভাগের রায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রাখা হয়। তা পুনর্বিবেচনায় নিজামীর আবেদন গত ৫ মে খারিজ হয়ে যায়।
তখন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন ৭৩ বছর বয়সী নিজামী। এরপর তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। সোমবার নিজামীকে রিভিউ খারিজের রায়টি পড়ে শোনানো হয়।
একদিন বাদে বিকালে স্বজনদের দেখা করতে কারা কর্তৃপক্ষ ডেকে পাঠায়। এরমধ্যে কারা ফটকে নিরাপত্তা জোরদার করা হলে তা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল।
এরপর রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, নিজামী ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেননি। দণ্ড কার্যকরের নির্বাহী আদেশ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
দণ্ড কার্যকরের আগে কাশিমপুর কারাগার থেকে জল্লাদ রাজুকে ঢাকার কারাগারে আনা হয়েছিল।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ