ফরিদপুরের সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে রবিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ আসা ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৬ জনের নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে। এতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে শতাধিক ব্যক্তি।
ঝড়ের কবলে পড়ে কয়েকশ' ঘর-বাড়ি, দুটি জুটমিলের টিনসেড ঘরসহ বেশকিছু স্থাপনা বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ের কবলে সবচে' বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জোবাইদা-করিম জুটমিলটি। মিলের সব স্থাপনাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপড়ে গেছে কয়েক হাজার গাছপালা, কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটি।
এদিকে, গাছপালা উপড়ে পড়ায় ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় ফরিদপুরে দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া আকস্মিক ঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কয়েক হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে রয়েছনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। যারা খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন তাদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা, অম্বিকাপুর, কানাইপুর, আলিয়াবাদ ইউনিয়ন ও সালথা উপজেলার গট্রি ইউনিয়নের উপর দিয়ে হঠাৎ করে ঝড় বয়ে যায়। প্রচণ্ড গতিতে বয়ে যাওয়া এ ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় গেরদা ইউনিয়নের বাখুণ্ডা গ্রামটি। গ্রামের বেশির ভাগ ঘর-বাড়ি বিধস্ত হয়। উপড়ে পড়ে কয়েক হাজার গাছপালা। ঝড়ের কারণে বাখুণ্ডা এলাকায় অবস্থিত জোবাইদা-করিম জুটমিলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জুটমিলটির বিশাল আকারের টিনসেড কয়েকটি ঘরের চালা উড়ে গিয়ে আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়ে। এসময় মিলটির ভেতরে চার হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। এসময় আতঙ্কিত হয়ে ছুটোছুটি করতে গিয়ে আহত হন কমপক্ষে ৭০ জন। আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নেবার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় হযরত আলী নামে এক মিল শ্রমিক। হাসপাতালে আহত হয়ে ভর্তি থাকা বাখুণ্ডা গ্রামের কাঠমিস্ত্রি বিরেন সিকদার মারা যায়। তিনি গাছের নিচে চাপা পড়েছেলেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, জোবাইদা-করিম জুটমিলের ভেতর থেকে ফরিদপুরের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে আরও তিনটি লাশ। এরা হলেন: চাঁন মিয়া, মালতি রানী ও আকাশ। এছাড়া কানাইপুর ইউনিয়নে গাছের চাপায় মারা যায় আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। জুটমিলের শ্রমিকেরা ছুটোছুটি করতে গিয়ে এবং টিনসেড ঘরের লোহার এঙ্গেল ভেঙ্গে পড়ে নিহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
জোবাইদা-করিম জুট মিলের ভেতরের কয়েকটি ঘরে এখনো উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। মিলের বেশকিছু শ্রমিক মারাত্মকভাবে আহত হওয়ায় নিহতদের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। ঝড়ের কবলে পড়ে শরীফ জুটমিলের একটি দোতালা ভবনের একতলা ভেঙ্গে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের কারণে ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গাছ পড়ে থাকায় ঘণ্টাব্যাপী যানচলাচল বন্ধ ছিল।
তবে জোবাইদা-করিম জুটমিলের শ্রমিকদের নিহতদের সংখ্যা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে। মিলের শত শত কর্মচারী ও তাদের পরিবারের লোকজন মিল গেটে ভিড় জমায়। শ্রমিকদের মিল গেট থেকে সরিয়ে দিয়ে পুলিশ হিমশিম খায়। বর্তমানে মিলের সামনে অবস্থান করছে কয়েক হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। ঝড়ের পর বাখুণ্ডা গ্রামে ছুটে যায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও র্যাবের কর্মকর্তারা। ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক বদরুদ্দোজা জানান, দুপুর থেকে সন্ধ্যা অবধি তারা শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী জানিয়েছেন, ঝড়ের কবলে পড়ে যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। আহত নিহতদের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। দুটি জুট মিল ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হলেও তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ঝড়ের কবলে পড়ে বাখুণ্ডা গ্রামটি লণ্ডভণ্ড হলেও সদর উপজেলার অম্বিকাপুর বাজারের বেশকিছু দোকান পাট, ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া কানাইপুর, আলিয়াবাদ, সালথা উপজেলার একটি গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ২১ আগস্ট, ২০১৬/ আফরোজ